Description
‘চা বাগানে ইসবার আইর এক মহাভারত হোবে, তু দেখে লিস কেনো, অজিতের ভয়ঙ্কর গম্ভীর কণ্ঠস্বরে জায়গাটি যেন মুহূর্তের মধ্যে নিস্তব্ধ নিঝুমপুরীতে পরিণত হল। পরক্ষণেই একটা চাপা গুঞ্জন শুরু হল। সেই গুঞ্জন ধীরে ধীরে উপস্থিত আদিবাসীদের যেন উত্তেজিত করে তুলল। সেই উত্তেজনা এমনভাবে ছড়াতে লাগল যেন এখনি তারা ফুঁসে উঠবে। এসব দেখে প্রভাসের মুখটা পাংশু বর্ণ ধারণ করল। সব কিছুই খেয়াল করল পোড়খাওয়া রাজনীতিক প্রদীপ চাকী। সে এতক্ষণ দুপক্ষের কাউকেই থামাবার চেষ্টা করেনি— কারণ আসল ঘটনাটা সে জানতে চাইছিল। এবার সে বলে ওঠে, ‘আপনারা সবাই শান্ত হোন। আমি হাতজোড় করে বলছি শান্ত হোন সকলে। আর প্রভাস, এটা কর্মীসভা। ফলে এখানে কারও মনে ক্ষোভ থাকলে সে প্রশ্ন করতেই পারে। তুমি বাধা দিচ্ছ কেন? আর আপনাদের উদ্দেশ্যে বলি, আরতি আর দোলাকে নিয়ে আপনাদের যখন এত অভিযোগ তখন পুলিশকে দিয়ে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করানো হবে। তাতে যদি আমাদের পার্টির কেউ জড়িত থাকে তাহলে তাকেও ছাড়া হবে না, তা সে যত বড় নেতা-ই হোক, বা কেউকেটা।’
যেটা প্রদীপ চাকী চেয়েছিল তাইই হল। তার কথা শেষ হতেই আদিবাসীদের সম্মিলিত হাততালিতে মুখর হল জায়গাটি। বিচক্ষণ চাকী কিছুক্ষণ থেমে ফের বলা শুরু করল, ‘আমার প্রিয় ভাই বোনেরা, আমি জানি এখানে যারা বসবাস করেন, তাদের কি দুঃখ কষ্ট সহ্য করতে হয়। দিনকাল অনেক পাল্টেছে, যুগ আধুনিকতার একবারে শেষ সীমানায় অথচ আপনারা সেই অন্ধকারেই পড়ে রয়েছেন। আমাদের সরকার সেই অন্ধকার দূর করতে বদ্ধপরিকর। চা শ্রমিকদের অন্ধকার জীবনে আলো আমরা জ্বালাবই। ঠিকই বলেছেন আপনারা, এর জন্যে যদি কুরুক্ষেত্রের মত যুদ্ধ সংঘঠিত করতে হয় তাতেও পিছপা হব না আমরা। আরেকটা মহাভারত আমরাও চাই বন্ধু। আর তাতে লেখা থাকবে এই তরাই ডুয়ার্সের সংগ্রামের যুদ্ধ কথা।
ফের আরেকবার আদিবাসী শ্রমিকরা উল্লাসে ফেটে পড়ে। অজিত তার অসহায় অশিক্ষিত জাতির কাণ্ডকারখানা দেখে মনে মনে ভাবে, ধাপ্পাবাজদের ধাপ্পাবাজী কবে এরা বুঝতে শিখবে?
মহাভারত যুগ পার হয়ে গেছে বহুকাল। অত্যাধুনিক যুগের স্বর্ণশিখরে ভূভারত। সত্য ও ধর্ম প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে লাঞ্ছিত দ্রৌপদীর চোখের জলে সেদিন কুরুক্ষেত্র রচনা হয়েছিল। জঙ্গল তথা চা বাগানের অসংগঠিত শ্রমিকদের উপর সুপরিকল্পিত অত্যাচার সংগঠিত হয়ে চলেছে সেই আদিকাল থেকে। ক্ষমতার উচ্চশিখরে বসা মানুষের উরুতে বসে নীরবে চোখের জল ফেলে চা বাগানের অগণিত দ্রৌপদীর দল। ন্যায়বিচার এখানে অন্ধ । সত্য, ধর্ম রাজনীতির যাঁতাকলে পিষ্ট হতে হতে অতি ক্ষীণ। গোপনে একক লড়াই চালিয়ে যায় তমাল। তমালকে চরম আঘাত হেনে ক্ষিপ্ত করে তুলতে তার প্রেয়সী সমাজসেবী শিক্ষিকা ডক্টর করবীর উপর পৈশাচিক আক্রমণ চালায় তরাই-ডুয়ার্সের ক্ষমতালোভী দুর্যোধন, দুঃশাসনের দল। লীলার মুখে নিজের নির্যাতনের কথা শুনে চা বাগান ও জঙ্গলের অসংগঠিত শ্রমিকেরা সংগঠিত হল। তমাল, করবী, দেবরাজদের হাত ধরে অসংগঠিত শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়া ভারতভূমিতে নতুন কোনও বার্তা দিল কি না তা ভবিষ্যত বলবে। তবে, তরাই-ডুয়ার্সে তমালের হাত ধরে সুগঠিত লড়াইয়ে আরেক কুরুক্ষেত্রের যে নয়া রূপরেখা তৈরি হল তাতে রাত্রি চোখের ঘুম কাটিয়ে নতুন সূর্যের অপেক্ষায় জেগে বসে আছে তামাম শীর্ণকায়া মেহনতি মানুষগুলো।
Reviews
There are no reviews yet.