Description
“ ১৯৪৭-এর ১১ এপ্রিল নিউ ইয়র্ক-এ ব্রডওয়ে থিয়েটার প্রেক্ষাগৃহে চার্লি চ্যাপলিন-এর মঁসিয়ে ভের্দু ছবি মুক্তিলাভ করে। তার আগেই ছবিটির এক ঘরোয়া প্রদর্শনে উপস্থিত প্রবাদপ্রতিম জর্মন কথাসাহিত্যিক টোমাস মান ও নাট্যকার লিঅন ফয়েখ্ট্ভাঙ্গার প্রদর্শন শেষে উঠে দাঁড়িয়ে এক মিনিটেরও বেশি সময় ধরে সপ্রশংস করতালি দেন। মঁসিয়ে ভের্দু ছবির বিখ্যাত বিচার দৃশ্যে বহু হত্যার দায়ে অভিযুক্ত অঁরি ভের্দু (যে-ভূমিকায় অভিনয় করেন চ্যাপলিন নিজে) তার জবানবন্দিতে বলেন : “আমাকে যদি গণহত্যাকারী বলা হয়, আমি প্রশ্ন করব : সারা পৃথিবী কি গণহত্যাকারীদেরই উৎসাহিত করে? কেবলমাত্র গণহত্যার উদ্দেশ্যেই কি পৃথিবী বৈনাশিক সমরাস্ত্র তৈরি করে যাচ্ছে না? এতটুকু সন্দেহের সুযোগ পর্যন্ত না দিয়ে অত্যন্ত বিজ্ঞানসঙ্গতভাবেই কি নারী ও শিশুদের শরীর ছিন্নভিন্ন করে দেওয়া হয়নি? সে তুলনায় গণহত্যাকারী হিসেবে আমি তো নিতান্তই অ্যামেচার।
ছবির মুক্তিলাভের পরের দিন সকালে গথাম হোটেলের জমজমাট : সাংবাদিক সম্মেলনে তাকে প্রশ্ন করা হয় : ‘গ্রেট ডিকটেটর কি রাশিয়াতে দেখানো হয়েছে?’ ‘একথা কি সত্য যে মার্কিন ছবি নির্মাণ সোভিয়েত ইউনিয়নে স্থানান্তকরণে নিয়োজিত এক চলচ্চিত্র সংস্থানের সঙ্গে আপনি যুক্ত?’ ‘অতীতে অনেকবারই কথা উঠেছে যে আপনি কমিউনিস্টদের সহযাত্রী, কমিউনিজম্-এর প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন।
প্রবাদপ্রতিম চিত্র সমালোচক জেমস্ এজি ওই কুৎসিত প্রশ্নগুলিকে যেন বা ঘুরিয়ে দিয়েই প্রশ্ন করলেন : “শিল্পী হিসেবে এত আনন্দ, সাধারণ মানুষের প্রতি এমন সহানুভূতি ও সহৃদয়তায় পৃথিবীকে এমন বিপুলভাবে সম্পন্ন করার পর আজ যখন এই দেশকে এক ‘স্বাধীন দেশ’ বলে বড়াই করে কিছু লোক আপনাকে অপমান করে, আপনাকে বিতৃষ্ণায় কালিমালিপ্ত করে, আপনি প্রতি ঘণ্টা ধরে সারা দিন ধরে কী করবেন বা কী করবেন না, তার বিধি নির্দিষ্ট করে দেবার ঔদ্ধত্য দেখায়, আপনি কোনোদিন মার্কিন নাগরিকত্ব গ্রহণ করেননি বলে আপনার উপর নৈতিক ব্ল্যাকমেল চাপিয়ে দেয়, তখন আপনার কী মনে হয় ?
চ্যাপলিন-এর প্রচারসহকারী চ্যাপলিন-এর কানে কানে বলেন, এ ভদ্রলোক আপনার পক্ষে। বড়ো ভালো একটা কথা বলেছেন উনি। কিন্তু ততক্ষণে চ্যাপলিন-এর মন ভেঙে গেছে : ওঁর সদয় কথাতেও আমার মধ্যে আর লড়বার প্রবৃত্তিটা ফিরে এল না। আমি তখন জেনে গেছি, আমার বিরুদ্ধে এক ঘোরতর বিষাক্ত শত্রুতা তৈরি হয়েছে। নিউ ইয়র্কে ছ-সপ্তাহ ছবি চলে, ‘খুবই ভালো ব্যবসা হয়’। ১৩ জুন হাউস আন-অ্যামেরিকান অ্যাকটিভিটিজ কমিটির সদস্য জন এ র্যাংইকিন ঘোষণা করলেন, চ্যাপলিন-এর জীবনযাত্রা পদ্ধতি আমেরিকার নৈতিক কাঠামোর পক্ষে ক্ষতিকারক। তার ‘ঘৃণ্য ছবিগুলি যাতে মার্কিন যুবসমাজের দৃষ্টির বাইরে রাখা যায় তা নিশ্চিত করতে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে চ্যাপলিন-এর নির্বাসনের দাবি তুললেন। ইতোমধ্যে খবর বেরুল সেপ্টেম্বরে ওয়াশিংটন-এ চ্যাপলিনকে কমিটি জেরা করবেন। সাপিনা আসবার আগেই চ্যাপলিন জেরার জন্য প্রস্তুত বলে ঘোষণা করলেন, এবং তখনই ওয়াশিংটনে ছবির মুক্তির জন্য হল বুকিং করলেন। ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭ ওয়াশিংটন টাইমস্ হেরাল্ড পত্রিকায় খবর বেরুল, ‘লিউইজ ক্যাপিটাল থিয়েটার মঁসিয়ে ভের্দু ছবির মুক্তির জন্য গত সপ্তাহেই বুক করা হয়েছিল। লিউইজ-এর ডিভিশন ম্যানেজার সেই মুক্তি স্থগিত করে দিয়েছেন, কারণ এই প্রদর্শনকালেই মি. চ্যাপলিন-কে সম্ভবত হাউস আন-অ্যামেরিকান অ্যাকটিভিটিজ কমিটির সম্মুখীন হতে হবে। ছবির পরিবেশক ইউনাইটেড আর্টিস্টস্ অন্য পাঁচটি হল-এ ২৬ সেপ্টেম্বর ছবির মুক্তির ব্যবস্থা করেন। চ্যাপলিন কমিটির সদস্যদের ছবি দেখতে আমন্ত্রণ জানান। পাঁচটি হল-এই বিপুল জনসমাগম হয়, দেশব্যাপী ‘বুকিং-এর ঝড় হয়ে যায়। চ্যাপলিন-এর নামে কমিটির সাপিনা জারি হয়, কিন্তু তাকে জেরায় শেষ পর্যন্ত ডাকা হয়নি। ”
– শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়।
এরকমই থিয়েটারের কিছু আশ্চর্য কথা নিয়ে আসছে শমীক বন্ধ্যোপাধ্যায়ের “থিয়েটারের আকাশে নক্ষত্রমালা”
এই বইতে আছে
সায়ক বক্তৃতামালা থেকে
• শিশিরকুমার
• বিজন ভট্টাচার্য
• শম্ভু মিত্র
• তৃপ্তি মিত্র
• উৎপল দত্ত
• অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়
ভারতীয় থিয়েটারে কিছু চেনা মানুষ
• বাদল সরকার
• এব্রাহিম আলকাজি
• সত্যদেব দুবে
• গো পু দেশপাণ্ডে
• হৈস্নাম কানহাইলাল।
Reviews
There are no reviews yet.