Description
সুতপা…বাবা-মায়ের সঙ্গে, বাবার বন্ধুর মেয়ের বিয়েতে গিয়েই প্রথম দেখা হয়েছিলসুদীপের সাথে! – ও আর পাঁচটা মেয়েদের মতো নয়! সাজগোজ পছন্দ করে না,কথায় কথায় ইংরেজি ছোটায় না…কথাবার্তা ধীর নম্র, নীচু স্বরে কথা! আর ওকে দেখতে? …দুধের সঙ্গে কফির সর মেশালে যেমন রং হয়, তেমনি গায়ের রং!…টানা টানা চোখ, সরু ভ্রু …একমাথা ঘন চুল …অনেকটা সিনেমার মৌসুমীর মতো লাগে!
বাবা বলেই রেখেছিলো, বিয়েবাড়ি যাবার কথা! …বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে! বাবা বাসুদেব মুখার্জি ও মা শেফালী দেবী দুজনেই অধ্যাপক অধ্যাপিকা।বিয়ে বাড়িতে বেশিরভাগ লোক সুতপাকেই, আড়চোখে দেখছে! প্রথম প্রথম অস্বস্তি লাগত।এখন গা সওয়া হয়ে গেছে! হালকা আকাশ নীল শাড়িতে আরও সুন্দরী লাগছে!
বাবার বন্ধুর স্ত্রী প্রশ্ন করলো “কি পড়ছো?”
মুক্তোর মতো দাঁতগুলো ওর। “রবীন্দ্রভারতীতে এম.এ পড়ছি”।
বাবা তাড়া লাগাচ্ছিলো খেতে বসার জন্যে।কেননা এতটা রাস্তা ফিরতে হবে! …একটা খালি টেবিল পেয়ে তিনজনে বসলো।একটা চেয়ার খালি দেখে, হন্তদন্ত হয়ে একটা ছেলে এসে বললো। “স্যার, এটা কি খালি?”
বাসুদেববাবু গম্ভীর মুখে মাথা নাড়লো! ধপ্ করে বসে পড়লো।যেন মিউজিকাল চেয়ারে প্রথম হলো! একেবারে সুতপার মুখোমুখি! – ও বুঝলো, খাওয়ার দফা শেষ! আজকালকার মেয়ে হলে কি হবে? অচেনা লোকের সামনে খেতে লজ্জা! এর জন্যে মায়ের কাছেও বকুনি খেতে হয়! তুই মনে হয়একশো বছর আগেকার কোন মহিলা।
ছেলেটার দিকে একপলক তাকিয়ে প্লেটটা টেনে নিলো! বাইশ বছরের সুতপা বুঝে গেলো, ছেলেটাও ওকে লক্ষ্য করছে! ছেলেটার গায়ে হালকা নীল রঙের সাধারণ শার্ট আর কালো প্যান্ট! সাদামাটা চেহারা।অনেকটা বাংলা সিনেমার শমিত ভঞ্জের মতো!
খাবার সার্ভ শুরু হয়ে গেছে! সবাই খাচ্ছে।কিন্তু সুতপা একটা ফিশ-ফ্রাই নিয়ে খুঁটেই চলেছে! ওর মা জানে, বলেও লাভ নেই! আর শমিত ভঞ্জ? রাজধানী এক্সপ্রেস ছোটাচ্ছে!!
বিরিয়ানী এসে গেছে, মা আর থাকতে না পেরে বলে ওঠে। “তুই একটু কিছু খা…।”
“খাচ্ছি তো…।”সুতপা বিড়বিড় করে বলে।মাংস দেওয়াও শেষ! – হঠাৎ সামনের ছেলেটার চোখ সুতপার প্লেটের ওপর পড়লো।সেখানে জমানো খাবার।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো “ইস্ …ন’টা বাজে, ট্রেনটা মিস করবো।”হঠাৎ দাঁড়িয়ে উঠে, হনহন করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেলো!
“ম্যানার জানে না…” বাবার গম্ভীর গলা!
“যাক বাবা বাঁচা গেছে…নে এবার একটু তাড়াতাড়ি মুখ চালা…।” খাওয়া সেরে ওরা যখন নীচে নেমে এলো,ভিড়ের মধ্যে ছেলেটাকেসুতপার চোখে পড়লো! দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আইসক্রিম খাচ্ছে! তার মানে, ওর জন্যেই মিথ্যে বলে নেমে এসেছে, অর্ধেক খেয়ে!
…একটা হালকা ভালোলাগার অনুভূতি ওর জীবনে প্রথম মনটাকে ছুঁলো।
রবীন্দ্রভারতীতে ক্লাস করে যখন সুতপা বেরোলো…তখন বেলা চারটে! রোদের তাপে রাস্তার পিচ গলছে! …বাস ধরার জন্যে একটু এগোতেই চটিটা ছিঁড়লো…।সব্বোনাশ… বাড়ি যাবে কি করে? ঘাড় ঘুরিয়ে এদিক সেদিক দেখলো, যদি মুচির দেখা মেলে? জানে পাবে না! ফর্সা মুখে ঘাম জমছে!
একটা সাদা সুইফ্ট গাড়ী ওর গা ঘেঁষে দাঁড়ালো! দরজা খুলে সেদিনের শমিত ভঞ্জ বেরিয়ে এলো! “চিনতে পারছেন?” দাঁত বার করলো! …ও কি পিছু নিয়েছে নাকি? বিশ্বাস নেই! ভ্রু কুঁচকে তাকালো। “আপনি যদি বলেন, চিনতে পারছেন না …জানবো মিথ্যে বলছেন! কেননা, আপনার চোখ বলছে…চিনতে পেরেছেন” এতো দেখছি নিজেই প্রশ্ন করে নিজেই উত্তর দিচ্ছে!
“আমাকে ফলো করছেন নাকি?”
“একদম না …বাড়ি ডানলপ …এদিক দিয়েই যেতে হয়, জানেন নিশ্চয়ই…” কাঁধ ঝাঁকালো! সুতপা এখন চটি নিয়েই চিন্তিত!
“কতদূর যাবেন? …চলুন পৌঁছে দিচ্ছি! অবশ্য যদি আপত্তি না থাকে!” সহজ গলায় বললো! সুতপার মনে তখন সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করে দিয়েছে! কোন বদ মতলব নেই তো? আজকাল যা হচ্ছে চারদিকে! তারপরেই মনে পড়লো…বাবার বন্ধুর পরিচিত!
মুখে বললো “…আমার বাড়ি বালি, শুধুশুধু অতখানি যাবেন কেন?” -এই প্রথম কোন অপিরিচিত ছেলের সঙ্গে ও কথা বলছে তাও একা একা…
“অত চিন্তা করতে হবে না…খুব গরম, ঘেমে যাচ্ছেন! আপনাকে নিয়ে কোথাও পালাবো না… সে সাহস আমার নেই! …উঠুন…উঠে পড়ুন।”
দোনামোনা করছে মনটা …কিন্তু চটিটার কথা মাথায় আসতেই বললো “…পিছনের সিটে বসবো।”
“আপনার ইচ্ছে” ও উঠলো…গাড়ির ভেতরটা ঠান্ডা!
সুতপার তবু অস্বস্তি! ফোনটা মুঠোয় ধরে রাখলো।বেগতিক দেখলে…
গাড়ি চালাতে চালাতে মুখ চলছে “আপনার মুখ দেখলে যে কেউ এখন বলবে…ইচ্ছার বিরুদ্ধে আপনাকে নিয়ে আমি পালাচ্ছি।” ও হাসলো!
“চটিটা এমন সময় ছিঁড়লো” রুমাল দিয়ে মুখ মুছলো!
“-আমার নাম সুদীপ” নিজে থেকেই বললো! সুতপা ভাবছে …এবার শুরু হবে নিজের প্রশংসা! …গাড়ি আছে – বাড়ি আছে- বড়ো বড়ো কথা, নিজেকে হিরো প্রমাণ করার জন্যে!
“আপনি ভাবছেন, গাড়িটা আমার তাই না? …ও অবাক হলো! মনের কথা পড়তে পারে নাকি?
“মোটেই এসব ভাববেন না…ছোটবেলায় এক পথ দুর্ঘটনায় মা-বাবা দুজনকেই হারাই…তারপর থেকে মামার কাছে মানুষ…! আমার জন্যে সারাজীবন বিয়েই করলো না!…তাও দেখুন, আমাকে নিয়ে কত স্বপ্ন দেখেছিলো! কি হলো? …একটা ছোটোখাটো ওষুধের কোম্পানিতে কাজ করি! মামার এই গাড়ি নিয়ে সারাদিন সাপ্লাইয়ের কাজ।” নিজের মনেই বকে চলেছে! সুতপা মুখের ওপর পড়া চুলগুলো সরালো! …বালি ব্রিজ পেরোচ্ছে! ভাবছে বাড়ির সামনে নামাটা ঠিক হবে না…কে কি মনে করবে?…বুঝতে পারছে না, এইরকম উদ্ভট চিন্তাই বা মাথায় কেন আসছে? …তবে কি মনের অগোচরে, সুদীপকে ভালো লাগছে?
পড়ুন “দেখা হয়েছিল”!
শঙ্কর চ্যাটার্জী র “সুখ দুঃখের নির্বাচিত গল্প”।
Reviews
There are no reviews yet.