Description
মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে যা বলে তা বেশীর ভাগ সময়ে বুঝে বলে না আর যা বোঝে সেটাও বেশীর ভাগ সময়ে বুঝে বলে না।
হামবড়াই করতে করতে, নিজের পিঠ নিজেই চাপড়াতে চাপড়াতে মানুষ নিজের ‘অহম’ কে ঠিক কতটা ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে এক মহাকায় বেলুন তৈরী করে সে তা নিজেই বোঝে না। সারাক্ষণ দল জুটিয়ে অন্যকে জুতোতে পারলে তার আনন্দ সবচেয়ে বেশী।
যে কথা তারা নিত্যদিন বলে আসছে তার আগাপাশতলা কিছু না জেনেই, শব্দের মানে না বুঝেই নিজের মত করে মানে বলে দেওয়া বা কেউ একটা মানে বলে দিয়েছে সেটা কে অন্ধের মত মেনে চলাটাই অভ্যেস। বেশীরভাগ মানুষই অনুগামী হতে পছন্দ করে, মানে মানে ল্যাজ ধরে যদি পার হয়ে যাওয়া যায় আর কি।
কিন্তু শব্দের ল্যাজ যে ঠিক কতটা বড় আর সে কি ভাবে ল্যাজে খেলাতে পারে সেটা না জানলে খুব ই চাপ আছে। ভাষা হল বহতা নদী যা পায় সাথে নিয়ে চলে স্রোতের সাথে আর মোহনা তে মিশতে থাকে আর এই যাত্রা টা থেমে থাকে না। সমস্যা হল , যে হিমবাহ গলে এই নদী সৃষ্টি হয়েছে সেটা কে ভুলে যাওয়া মানে একটা শব্দের ভিতরে কি আছে আর বহিরাবরণে কি আছে সেটার ইতিহাস আর ভূগোল না জানলে ভুলের বোঝা বয়ে চলতে হয় বই কি।
নদী যেমন রাজ্য আর দেশের সীমানা মানে না ভাষাও তেমনি চলতে চলতে বদলাতে থাকে, আর বিশাল মানুষের সমাজ ভুলতে থাকে কোথা থেকে কি এসেছিল, কি ভাবে এসেছিল
একটা ছোট্ট উদাহরণ হয়ে যাক
এমনিতে এখনকার ছেলেপিলেরা মল বলতে শপিং মল বোঝে সাধারণত আর একটু পুরোনোরা শরীর থেকে বেরোনো আবর্জনা
কিন্তু আসলটা কি?
“ ‘মল’ শব্দটি অতীতে এমন বেশ কিছু অর্থে ব্যবহৃত হোত, যা বর্তমানে বিরল। যেমন ‘কর্পুর’ ( সূত্র –‘শব্দকল্পদ্রূম’ ), ‘পাপ’ ( সূত্র- মনুসংহিতা) ব্রণ বা ‘যৌবনোদ্ভবপিটিকা’ (সূত্র – সুশ্রুতসংহিতা) ইত্যাদি । তবে, ‘পায়ের গহনাবিশেষ’ বা ‘মরদ্দন’ ( কানমলা) ইত্যাদি ভিন্নগোত্রের অর্থে আজও ব্যবহার হয়। তার পাশাপাশি ‘মলিন’, ‘মল্লপট্ট’ (মলাট), ইত্যাদি শব্দে ‘মল’ এর অশুচিতার গন্ধ পাওয়া গেলেও গোলমাল বাঁধে ‘মলয়’ শব্দটি নিয়ে। এর ও মূলে সেই ‘মল’ ধাতু । অথচ শব্দটির অর্থ কি না ‘চন্দনধারক’ ‘নন্দনবন’ ইত্যাদি। প্রচলিত অর্থে গু – গোবরের চিহ্ন অবধি নেই। পশ্চিমঘাট পর্ব্বতমালা কে অকারণেই ‘মলাবার’ বলা হয় না।
শুধুমাত্র ‘মল’ শব্দটির logocentric কারণেই…
… শব্দটিকে বোঝার আগে মাথার গু-গোবর সংক্রান্ত ভাবনাগুলোকে কিছুক্ষণের জন্য দূরে রাখতে হবে ।
‘মল’ ধাতুর অর্থ হল ‘ধারণ’ করা । সুতরাং ‘মল’ শব্দের ক্রিয়াভিত্তিক অর্থ হল ‘ যাকে ধারণ করা হয়েছে’ । এই ‘ মল’ এর সঙ্গে ‘ষ্ণ’ প্রত্যয় যোগে, ‘সম্পর্কিত’ অর্থে ‘মাল’ শব্দটি এসেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ষষ্ঠাদশ শতাব্দীতে গুরু নভদাস ‘খরিবোলি’ র ( সুপ্রাচীন হিন্দি) পূর্ব্বরূপ ‘ব্রজভাষায় দু’শো জন ভক্তের জীবনকাহিনীর ‘ধারক’ হিসাবে একটি কাব্য রচনা করেন – যার নাম ‘ভক্তমাল’ ( বাংলা অনুবাদের ‘শ্রীশ্রী ভক্তমাল গ্রন্থ’)”
এই যে এতক্ষণ ধরে কোটেশনের মধ্যে মল এর নামকীর্তন গাইলাম সেটা আমার লেখা না
আমার সংগ্রহের একটি বই থেকে যেটা আমি সুযোগ পেলেই পড়ি।
আর এই বইটা যে লিখেছে সে কোন সাহিত্যের অধ্যাপক বা গবেষক না সারাক্ষণ সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে এদিক ওদিক বিদ্যে ঝাড়ে।
আর আমাদের দেশের সমস্যা হল যে যা করে তার বাইরে তাকে না কিছু করতে দেওয়া হয় বা কর তে উতসাহ দেওয়া হয়। এই যেমন অনুপকুমার আর রবি ঘোষ সারাক্ষণ ভাঁড়ামি করবেন, আমজাদ খান খালি ভিলেন হবেন , ডাক্তারের ছেলে ডাক্তার হতেই হবে
স্কুল কলেজে সাহিত্য পড়ান, বা নামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য বা তুলনামুলক সাহিত্য নিয়ে না পড়লে তাকে একটু হেলাচ্ছেদ্দা করা হবে । আসল কথা দুদিন আগে কি একটা কথা হচ্ছিল না
নেপোয় মারে দই মানে নেওপটিজম নিয়ে?
তা সাহিত্য জগতে তা আছে বই কি?
দাদা তো ধরতেই হয় নইলে বিষ নজরে পড়তে হয় বেশীর ভাগ সময়ে
তা এই বইটি সৌরভ যে পরিশ্রম করে লিখেছে , যে পরিমানে গাল খেয়েছে আর খাচ্ছে তার কণামাত্র যদি টি আর পি বাড়িয়ে লোকের ঘরে ঘরে যেত
কিছু মানুষ অন্তত জানত ভাষা আর শব্দের ভিতর আর বাইরে কি চলছে
চাইলে পড়তেই পারেন
সৌরভ মিত্রের লেখা
‘শব্দের ভিতর ও বাহিরে’
Reviews
There are no reviews yet.