Description
ইরাবতী নন্দী। গুণী, শিক্ষিতা রুচিশীল। বছর তিরিশ বয়স। ইনসিওরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করেন। বর্তমানে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রায় অ্যাণ্ড সেন কোম্পানির প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়া একটা ডিভিশন “প্রদীপের আলো’’-র, যাকে পুনরুজ্জীবিত করাতে চায় ঐ সংস্হার কর্ণধার রঘুনাথ সেন।
কে এই ইরাবতী?
ইরাবতীর সমস্ত পরিচয়ের আড়ালে লুকিয়ে আছে তার এক নগ্ন ইতিহাস।
ইরাবতী একজন ধর্ষিতা নারী। ইরাবতীকে ধর্ষণ করেছে তার কৈশোরের খেলার সাথী, যাদের সাথে সে সাঁতার কাটতো, ঘুড়ি ওড়াতো, সাইকেলে টোটো করে ঘুরে বেড়াতো। একদিন তারাই প্রমাণ করে দিয়েছে ইরাবতী একজন নারী।
এ সমাজ শেখেনি ধর্ষকের সাজা শোনাতে । এ সমাজে ধর্ষকের বাবা-মা নিজের সন্তান কে নাবালক বলে দাবি করে। এ সমাজ জানে না, ধর্ষিতা যদি মা হয় সেই সন্তানের দায়িত্ব কার? একজন বিকারগ্রস্থ পশুপুরুষ সে মানুষের নাম নিয়ে এ সমাজে বেঁচে থাকতে পারে কি? এ প্রশ্ন করার জায়গা নেই।
যেখানে ধর্ষকের সাজা নেই সেখানে তো ধর্ষিতার যাবতীয় লজ্জা। হ্যাঁ, কিশোরী ইরাবতী একবুক লজ্জা, অপমান মেনে নিয়ে করতোয়া গ্রাম ছেড়ে রাতের অন্ধকারে কলকাতায় চলে আসে আশ্রয়ের জন্য।
সময়ের সাথে সাথে ইরাবতীর শরীর থেকে ক্ষতের দাগ মিলিয়ে গেল। কিন্তু সব যন্ত্রণার অস্তিত্ব রয়ে গেল তার মনের গভীরে। ইরাবতী ঘৃণা করতে শিখল গোটা পুরুষ জাতকে। পুরুষত্বের যাবতীয় অহংকার কে পায়ের তলায় পিষে ফেলতে শুরু করল।
তবুও তার জীবনে প্রেম আসে। ধর্ষণ নিয়ে রগরগে ভাষণ দেওয়া কলেজের সেই সিনিয়র ছেলেটির প্রতি। ইরাবতী ছুটে গিয়েছিল তার কাছে তার জীবনের সেই অন্ধকার অধ্যায়টুকু বলবার জন্য। ছেলেটির সময় ছিল না ইরাবতীর কথা শোনার। ফিরে এসেছিল ইরাবতী।
একদিন সেই ছেলেটিই ইনসিওরেন্স কোম্পানিতে ছুঁটে আসে ইরাবতীর কাছে সাহায্যের প্রত্যাশায়। তাকে ফিরিয়ে দেয়নি ইরাবতী। সেই পুরুষটির সাথেই ইরাবতীর কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ হয়। এখানেই গল্পটা থেমে যেতে পারত।
কিন্তু আজ ইরাবতীর মন খারাপ। ইরাবতীর মনের আকাশে আজ একটুকরো কালো মেঘ । আজ ইরাবতীর ডিভোর্স। ইরাবতীর কাছে জয়দেব নামে একটুকরো ভালোলাগা ছিল আজ তাও ফিরিয়ে দিতে হবে পরাগকে। বাবা মা কেউ বেঁচে নেই আজ। সে একা। পরিমল কাকার ছেলে নীলাদ্রিকে সে অস্বীকার করেছে। সে ভালোবাসা চায়,করুণা চায় না। ইরাবতী পুরুষ চায় না সে পুরুষরূপী একজন মানুষ চায়। ইরাবতী কি বলতে পারল তার অতীতের কালো অধ্যায়টুকু?
পুরুষ-নারী নির্বিশেষে আমাদের প্রত্যেকের শরীরে একটা করে বেঁচে থাকার আলো বা বাঁচিয়ে রাখার আলো লেগে থাকে।এই আলোকে চিনে নিতে হয়। কেউ কেউ পারে এই আলো চিনতে।
আলো কেনা যায় না। আলো স্বেচ্ছায় আসে। আলোকে উপযুক্ত সম্মান দিয়ে ঘরে আনতে হয়।
এখন লম্বা লম্বা সিঁড়ি দিয়ে নীল শাড়ি পরা যে সুন্দর মেয়েটি গটগট করে হেঁটে আসছে সে কে?
প্রদীপের আলোর কর্মীরা জানেনা সে কোথাও নূপুর কোথাও বকুল,কোথাও বা পরাগ। আর এখানে সে ইরাবতী।
Reviews
There are no reviews yet.