Description
রাত বারোটা। সীমা অনেকক্ষণ আগেই বিছানা নিয়েছে। মড়ার মত ঘুমোচ্ছে সে। বস্তুত, অনিন্দ্রা জনিত অসুখের দরুন রোজই তাকে ঘুমের ওষুধ খেতে হয়। গায়ের কম্বল সরে গিয়ে নীল বেনারসী আবৃত সীমা যেন যৌবনের মধ্যগগনে জ্বলজ্বল করতে থাকা একটি তারা। যার আলোয় চারপাশ ঝিকমিক করে। উত্তাপ ছড়ায়।
ওদের কোনো সন্তানাদি নেই। এ নিয়ে সীমার দুঃখের অন্ত নেই। চন্দ্রনাথেরও ভেতরে ভেতরে কষ্ট হয়। তবে তিনি বাইরে প্রকাশ করেন না ; করেন না কেবলমাত্র সীমার কথা ভেবেই।
বলাবাহুল্য, ওরা দুজন বেঁচে আছে পরস্পরকে আঁকড়ে ধরে। প্রতিবার কলকাতা গেলে চন্দ্রনাথ বাকি বন্ধুদের ফাঁকি দিয়ে বিকেল বিকেল পৌঁছে যায় গঙ্গার সেই ঘাটে। সেখানে সেই সিমেন্টের বেদীতে বসে বসে কিছু সময় কাটান। একদৃষ্টে চেয়ে থাকেন স্রোতস্বিনী গঙ্গার দিকে।
কবেকার যৌবনের সোনায় মোড়া সেই সব স্মৃতি ঝালিয়ে নিতে বারে বারে সেখানে ছুটে যাওয়া এবং ছুঁতে চাওয়া। ঠিক ছিল পরের বার সীমাকে নিয়ে এসে আবার এখানে বসবেন। গঙ্গার ধারে । সেই বেদীতে। বলাবাহুল্য,কাঠখোট্টা সে কাঠামোতে লেগে রয়েছে কবেকার মধুচন্দ্রিমার মধুর পরশ। এখানে বসলে চন্দ্রনাথের মন ভালো হয়ে যায় । প্রত্যেক বার। তাই ঠিক করেছেন পরের বার এই সুখ স্ত্রী পাক। এমনটাই তো ঠিক ছিল, অন্তত কলকাতা পৌঁছানোর আগে অব্দি। কিন্ত ইংরেজিতে একটা কথা আছে না ‘Man proposes god disposes ‘ …মানুষ ভাবে এক, হয় আরেক।
গতকাল বিকেলে গিয়ে দেখে এসেছেন তাদের ভালবাসার নীরব মধুর সাক্ষী– সেই সিমেন্টের বেদীকে উপড়ে ফেলার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। পুরানো আমলের সে কাঠামো বদলে হাল ফ্যাশনে নতুন কিছু একটা আসছে। এখানেই শেষ নয়। ঘাটের চারপাশটা রীতিমত ঢেলে সাজানো হচ্ছে। প্রচুর দোকানপাট বসছে। তাঁদের আদি ও অকৃত্রিম ভালোবাসার জায়গাটিকে ধ্বংস করে দিতে চায় মানুষজন। কারা যেন রীতিমতো ষড়যন্ত্র করে চন্দ্রনাথ ও সীমার ভালোবাসাকে সমূলে উৎপাটন করে ছুঁড়ে ফেলে দিতে চায় বাতিলের স্তূপে।
নাঃ, এ দুঃসংবাদ সীমার কাছে অজ্ঞাতই থাক। চন্দ্রনাথ তার মনের ভাঙচুর দশা কোনো ক্রমে সীমার কাছে প্রকাশ করতে চায় না ; করবেও না হয়তো কোনো দিন।
সীমার বুকের ভেতর আজীবন বেঁচে থাকুক সেই তিনটে বিকেল– একটা নদী — একটা সিমেন্টের বেদী এবং অপার অপার্থিব নস্ট্যালজিক বিস্ময়…….
________________________________________
মানুষের দৈনন্দিন দীনতা, মূল্যবোধের পতন, সম্পর্কের জটিলতা, অস্তিত্বের অসহায়তা, অতলান্তিক রহস্য-গভীরতা—এই সমস্ত বিষয়গুলোকে ছোটগল্পের আঙ্গিকে তুলে ধরার এক প্রয়াসই হলো ‘সামনে সীমান্ত’। সর্বমোট দশটি গল্প দিয়ে সাজানো এ সংকলন।
Reviews
There are no reviews yet.