Description
ছেলেবেলা থেকে একটা চালু গল্প শুনে এসেছি আমরা। প্রিন্স দ্বারকানাথ ‘প্রিন্স’ হয়েছিলেন টাকা উড়িয়ে আর বাবুগিরি করে; মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ মহর্ষি হয়েছেন সাধনা করে। দ্বারকানাথ গত হয়েছিলেন এক কোটি টাকা (সেকালে!) ঋণ রেখে; তাঁর পুত্র ‘মহর্ষি’ সে ঋণ পরিশোধ করেন সর্বস্ব দিয়ে।
ছেলেবেলার শোনা গল্পকে যদি কেউ সারাজীবনেও প্রশ্নের আতশকাচের নীচে না রাখেন -তাহলে তাঁর আর বড় হওয়া হয় না। এ প্রসঙ্গে যে প্রশ্নটা মাথায় আসে সেটা নেহাৎ সাদামাটা অর্থনৈতিক প্রশ্ন – ‘দেবেন্দ্রনাথ এই বিপুল ঋণ শোধ করলেন কী উপায়ে?’
এই সাধারণতম প্রশ্নটার উত্তর খুঁজতে গিয়েই আমার সন্ধান মিলল এক বিচিত্র, দ্বিধাগ্রস্ত, দিগ্বিজয়ী অথচ ব্যথাতুর, হিংস্র কিন্তু পরম উদার এক মহাপুরুষের বিবর্ণ বিস্মৃতপ্রায় গ্যালারি। দ্বারকানাথ ঠাকুর। খুব যত্ন করে তাঁর বহুবর্ণ জীবনকে মুছে দিয়েছিলেন তাঁর উত্তরপুরুষেরা;
কিন্তু কেন? কেন এই গোপনীয়তা?
দীর্ঘ অমানিশার শেষে তখন পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রথম আলো ফুটে ওঠার পালা৷ কলকাতায় আসছেন রামমোহন রায় ! তাঁর আগমন যেন সোনার কাঠি ছুঁইয়ে দিচ্ছে ঘোর নিদ্রামগ্ণ জাতির দেহে৷
প্রথম যে মানুষটি সেই ঘুম ভেঙে উঠে এলেন, এবং পরবর্তীতে যাঁর নাম আমরা মুছে ফেললাম, তিনিই দ্বারকানাথ ঠাকুর৷
এই মানুষটিই নবজাগরণের সেই বিস্মৃত পশ্চাৎপট, যাঁর ছবিতে কখনো আলো পড়েনি৷ সেই পট, যার উপরে ফুটে ওঠে রামমোহন রায়, ডিরোজিও, ডেভিড হেয়ারের উজ্জ্বল ছবি৷ ভারতবর্ষের চিকিৎসাব্যবস্থা, চিত্রকলা, গ্রন্থাগার আন্দোলন, অভিনয়শিল্প, প্রথম রাজনৈতিক সভা, ব্যবসাবাণিজ্য…এমন অসীম অনন্ত ক্ষেত্রে
তাঁর অন্তহীন দান আমরা অনায়াসে বিস্মৃত হই৷
উত্তরপুরুষদের বানিয়ে-তোলা এক ছবিকেই আমরা দ্বারকানাথ ঠাকুর বলে জেনে এসেছি সার্ধশতবর্ষ ধরে৷ একবারও সত্যকে চিনতে চাইনি৷
এই বই সেই দ্বিধান্বিত, খণ্ডবিখণ্ড, উদার অথচ প্রশ্ণাতুর মানুষটির মুখে একঝলক আলো ফেলেছে৷ নতুন আলোয় দেখা দিচ্ছে এক বিস্ময়কর মহাচরিত্র৷
দ্বারকানাথ ঠাকুর৷ পরাধীন দেশের রাজপুত্র!… এক আশ্চর্য উন্মোচন৷
Reviews
There are no reviews yet.