PRABANCHAK

বইটির নামকরণ নিয়ে মহা ঝামেলা ভােগ করতে হয়েছে। সুধাংশু , মানে এ বইয়ের প্রকাশকের প্রবল আপত্তি ছিল নামটতে। অথচ কেন যে তাঁর আপত্তি সে কথা কিছুতেই স্বীকার করবে না । শেষে “ বাবু , মানে ওর ছােট ভাই , একদিন জনান্তিকে সেটা জানিয়ে দিল আমাকে। বললে , ব্যাপারটা কী জানেন ? দাদা তাে ওই দূরের টেবিলে বসে কাজ করে , কিন্তু কাউন্টারের কথাবার্তা সব শুনতে পায়। ক্রেতা এসে যখন আপনার বইগুলাে চায় , পরে মনে মনে গজরায়। খদ্দের হচ্ছে লক্ষ্মী , দাদা ওদের কিছু বলতেও পারে না … আমি তাে বিশ – বাঁও জলে। বলি , কী বলছ মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝছি না ! —মানে কাউন্টারে এসে ওরা আপনার বইগুলাে চায় তাে ? শুনতে খারাপ লাগবে না ? -খারাপ লাগবে ? কেন ? —আপনি বুঝছেন না। সবারই ঘরে ফেরার তাড়া। সংক্ষেপে হাঁক পাড়ে : আমাকে একখানা- বিশ্বাসঘাতক নারায়ণ সান্যাল , এদিকে একখান না – মানুষ নারায়ণ সান্যাল , কিংবা রাস্কেল নারায়ণ সান্যাল! শুনতে খারাপ লাগবে না ? তা বটে ! তাই আপনাদের সনির্বন্ধ অনুরােধ – দে’জ – এর কাউন্টারে এ বইটি কিনতে এলে অনুগ্রহ করে সম্পূর্ণ বাক্যটি বলবেন — ‘ নারায়ণ সান্যালের লেখা প্রবঞ্চক’ দিন। সংক্ষেপে ‘ প্রবঞ্চক , নারায়ণ সান্যাল চেয়ে বসবেন না ! আমি বিকর্ণ — দু – কান কাটা — কিন্তু তাতে সুধাংশুর ব্লাডপ্রেশার বেড়ে যায়।
এ বইতে দুটি বিচ্ছিন্ন কাহিনি। একটিই যােগসূত্র : প্রবঞ্চনার । চিত্রশিল্প জগতের। বস্তুত এ শতাব্দীর ললিতকলা – জগতের দুটি বৃহত্তম প্রবঞ্চনার। কাহিনির মধ্যেই উল্লেখ করেছি কোন্ কোন্ সূত্র থেকে তথ্যগুলি সংগৃহীত। একটা কৈফিয়ত দেওয়া বাকি আছে। অ্যানেসের সঙ্গে অটো ফ্রাঙ্ক – এর সাক্ষাৎ প্রসঙ্গ। অটো ফ্রাঙ্ক -এ কাহিনিতে প্রক্ষিপ্ত , নিষ্প্রয়ােজন। কিন্তু প্রিনসেনগ্রচ রাস্তার ২৬৫ নম্বর বাড়িটার কথা লিখতে বসে ২৬৩ নং বাড়িটার কথা বাদ দিতে কিছুতেই মন সরল না। সম্প্রতি আমস্টার্ডাম ঘুরে এসেছি। বাড়িটা দেখে এসেছি। রাস্তার মােড়ে সেই পঞ্চদশী প্রাণচঞ্চলা মেয়েটির একটি আবক্ষ মূর্তিও। একতলায় বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে নানান পােস্টার — প্রদর্শনী। দ্বিতলের ঘরগুলি যুদ্ধকালে যেমন ছিল তেমন ভাবেই সাজানাে। য়ুরােপ – ভ্রমণ কাহিনি লিখিনি , হয়তাে লেখার সময়ও পাব না । এটা সেই না – দেখা মেয়েটির প্রতি একটা তির্যক শ্রদ্ধাজ্ঞাপন।