Description
পালঙ্কে শুয়ে-শুয়েই মৃদু হেসে উঠলেন বৃদ্ধা সৌদামিনী দেবী।লজ্জায় আরক্ত হলেন পুনর্বার।আজও উনি ঘিরে রয়েছেন,দুহাত দিয়ে আগলে রেখেছেন তার মিনুকে।কথা রেখেছেন।কিন্তু সেদিনের ওই বালিকা তার কথার অবাধ্য হয়ে ওই চিঠিটা ভাসিয়ে দিতে পারেনি বাওড়ের জলে।কারণ কত যুক্তাক্ষর যে,তখনও রয়ে গেছে অজানা।নির্বাক বালিকা পেন্সিল দিয়ে দাগ দিয়ে রেখেছিলো সেইসব অক্ষর।হাসিদিদিকে দেখিয়ে তার মর্মোদ্ধার করতে হতো তো!আর সেসবের অর্থ বোঝার পর তো,প্রথম পাওয়া ওই অমূল্য রত্নকে কাছছাড়া করার চিন্তা দুঃস্বপ্নেও আসেনি আর।কিন্তু বুকের মধ্যে ওই চিঠি লুকিয়ে রেখে,সেদিনের বালিকা মিনী ছুটেছিলো জলের কিনারায়।সঙ্গে ছিলো খাতার পাতা ছিঁড়ে নিজের হাতে প্রস্তুত করা একখানি সাদা কাগজের নৌকো।আর ছিলো ঝোপঝাড় ভেঙে তুলে নিয়ে আসা মধুমঞ্জরী লতা।জলের কাছে গিয়ে বসেছিলো মিনী।জলের ওপরে এক বালিকা খোলা চুল নিয়ে ওর দিকেই চেয়ে রয়েছে।স্রোতহীন জলে নিখুঁত প্রতিবিম্ব।মনের আনন্দে জলের ওপর হাত দিয়ে কৃত্রিম স্রোত সৃষ্টি করে হাতের কাগজের নৌকোখানি মিনী ভাসিয়ে দিয়েছিলো জলের ওপরে।আর তার সঙ্গে ভাসিয়েছিলো একটিমাত্র মধুমঞ্জরী ফুলের স্পর্শ।শুধুমাত্র তার জন্যই….
বুকের গোপনে লুকিয়ে রাখা ওই চিঠিতে হাত রেখেই আহ্লাদিত সেই নারী সেদিন দেখেছিলো,অনুকূল বাতাসে পাক খেয়ে-খেয়ে যখন জলের ওপরেই একধারে কাত হয়ে গেলো ওই নৌকোটা,তখনও তার পালের ওপর ছুঁয়েছিলো গোধূলিবেলার নরম রোদ্দুর….কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে পাঁকের মধ্যে পা বসিয়েও,শেষবেলার ওই স্নিগ্ধ রোদে স্নান করে নিয়েছিলো সৌদামিনী…. কচুরিপানার একগুচ্ছ সিক্ত ফুল হাতে নিয়ে,যখন বাড়ির পথ ধরেছিলো সৌদামিনী,তখন স্রোতের টানে বাওড়ের জলে হারিয়ে গেছে কাগজের নৌকো…..আর ওই বিশেষ চিঠিখানি স্থান পেয়েছিলো নির্বাক বালিকার চুড়ি-কানের দুল,আর চুলের রঙিন ফিতের সঙ্গে,নকশা করা তালাবন্ধ এক গোপনীয় বাক্সে….
Reviews
There are no reviews yet.