Description
বর্তমানের নদিয়া জেলাকে দেখে বােঝা সহজ নয় , অতীতে এর আয়তন কোথা থেকে কোন পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। নদীবহুল নদিয়া জমিদারির বহু বিবরণ থেকে বর্তমানে আমরা জেলা নদিয়ার পরিচয় পাই। নবদ্বীপ ছিল একসময় জেলার প্রাণকেন্দ্র। শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম কেন্দ্র হিসাবে সারা ভারতেই ছিল নবদ্বীপের স্বতন্ত্র পরিচিতি। নবদ্বীপের স্থানমাহাত্মের কথা সকলেরই জানা। জ্ঞানীগুণী মানুষের ও বিদ্যার্থীদের সমাবেশ এক ভিন্ন স্বরূপের জনবসতি গড়ে উঠেছিল। মুসলমান আমলের শুরু থেকেই নদিয়া বদলাতে থাকে। ইংরেজ অধিকার বিস্তৃত হওয়ার পর নদিয়ার আয়তন সংক্ষিপ্ত হতে থাকে। নবদ্বীপের বা নদিয়ার রাজারা ছিলেন কৃষ্ণনগরের অধিবাসী। ফলে ধীরে ধীরে কৃষ্ণনগরও বদলে গিয়েছিল। রাজ পরিবার ছিল শিক্ষা ও সংস্কৃতির অন্যতম পৃষ্ঠপােষক। প্রজাকে শােষণ যেমন ছিল ব্যাপক , তেমনি ছিল দান ধ্যান। বাংলার অন্যান্য অঞ্চলের মতাে সমগ্র নদিয়ায় প্রশাসনিক সংকট ও সামাজিক অবক্ষয়ে জনজীবন যখন বিধ্বস্ত , সেরকম এক সংকটজনক পরিস্থিতিতে শ্রীচৈতন্যের আবির্ভাব। শ্রীচৈতন্য মুমূর্য হিন্দু সমাজ – দেহে নতুন প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন। যাঁর প্রাণাবেগ বহুকাল সঞ্জীবিত ছিল। ধীরে ধীরে কৃষ্ণনগর রাজবংশের খ্যাতি ও প্রতিপত্তি তলানিতে গিয়ে ঠেকলেও , নদিয়ার নবপরিচয় ইতিহাসে অম্লান হয়ে থাকে। স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক , ব্যবসায়িক চিত্রে নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ ঘটে— কৃষ্ণনগর , হরধাম , শিবনিবাস , শান্তিপুর , উলা, বীরনগর রানাঘাট , নবদ্বীপ , মায়াপুর , চাকদহ , কাচড়াপাড়া , বাগের গ্রাম , সুখসাগর , কুষ্টিয়া — সবমিলিয়ে বিবর্তিত চালচিত্র।
নদিয়া সম্পর্কে আলােচনা ও পর্যালােচনা কম হয়নি ! বিশেষজ্ঞ এবং ধর্মনিষ্ঠ মানুষের অবদানে হারানাে ইতিহাস ভাস্বর হয়ে উঠেছে। নদিয়ার সংলগ্ন কুষ্টিয়া দেশভাগের সময় তৎকালীন পূর্বপাকিস্থান , বর্তমান বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত হয়। কুষ্টিয়া রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ির জন্য যেমন বিখ্যাত , তেমনই লালন ফকির এবং কাঙাল হরিনাথের কর্মক্ষেত্র হিসাবে কুষ্টিয়া সমাদৃত। লালন ফকিরের নানা স্মৃতিসৌধ গােটা বাংলার বাউল – সাধকদের তীর্থক্ষেত্র। নদিয়ার সর্বত্র ছড়িয়ে আছে কৃষ্ণনগরের রাজা আর জমিদারদের বহু উপাসনাকেন্দ্র — যার স্থাপত্যশৈলী কালের দংশন থেকে রক্ষা পেয়ে আজও মুগ্ধ করে। মসজিদ , মাজার এবং ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসীদের তীর্থস্থানের অভাব নেই। নদিয়াকে বলা যায় হিন্দু – মুসলমান সকল সম্প্রদায়ের মানুষের সম্মিলিত সাধনক্ষেত্র। সংস্কৃত ভাষা ও শাস্ত্রচর্চার জন্য যে জনপদ সারা ভারতে বিখ্যাত হয়ে উঠেছিল একসময় , আজ তার সেই খ্যাতি ম্লান হয়ে গেছে। নদিয়ার মানুষজনের কথা তাদের জীবনধারা , শিক্ষা , শিল্প নৈপুণ্য , কুটির শিল্প , মৃৎশিল্প ও তাঁত শিল্প , ব্যবসাবাণিজ্য , বিদেশী ব্যবসায়ীদের আগমন , পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার , সংগীত ও নাট্যচর্চা — নানান বিষয়ে আরও গভীর গবেষণার প্রয়ােজন আছে। বিচ্ছিন্নভাবে যে সব আলােচনা হয়েছে , তার কিছু কিছু সংগৃহীত বিবরণ বর্তমান গ্রন্থভুক্ত করা হয়েছে।
Reviews
There are no reviews yet.