Description
Details
উনিশ-বিশ শতকে বাঙালি মুসলমানের জাগরণে সভা-সমিতির একটি বিশেষ ভূমিকা ছিল। সংস্কার ও রক্ষণশীলতা, অশিক্ষা ও গোঁড়ামির বলয় থেকে বেরিয়ে আসার জন্যে বাঙালি মুসলমানকে দিশা দিয়েছিল এই সামাজিক-সাংস্কৃতিক-ধর্মীয় সংগঠনগুলো। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯২৬-এর একেবারে গোড়ার দিকে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মুসলিম সাহিত্য সমাজ। ‘জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি যেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব’ – এই বীজমন্ত্র নিয়ে সাহিত্য সমাজের যাত্রা হয়েছিল শুরু। বারো বছর আয়ুষ্কালের এই সংগঠনটির বার্ষিক মুখপত্রের নাম ছিল শিখা। সংগঠনের নামের আগে ‘মুসলিম’ শব্দটি থাকলেও এখানে সাম্প্রদায়িক বিভাজন ছিল না-হিন্দু-মুসলমান উভয়েই এখানে স্বচ্ছন্দে অংশ নিয়েছেন। উদার মুক্তচিন্তার সঙ্গে সম্প্রদায়-সম্প্রীতির একটি আবহও গড়ে উঠেছিল সংগঠনের কর্মকান্ডে। এই মুসলিম সাহিত্য সমাজের সভার বিবরণ একটি বাঁধানো খাতায় লিখে রাখা হতো। মুসলিম সাহিত্য সমাজের সাধারণ ও বার্ষিক অধিবেশনের কার্যবিবরণী এই সংগঠনের কর্মকা-ের মূল্যবান ও প্রামাণ্য উপকরণ। সাহিত্য সমাজের এই কার্যবিবরণী মূলত সংগঠনের নির্বাচিত বা ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকই গুছিয়ে লিখে রাখতেন। যতদিন সমিতির কার্যক্রম চলেছিল, সেই বারো বছরের সভার বিবরণী-খাতা একসময় কাজী আবদুল ওদুদের কাছ থেকে তাঁর জামাতা, ওই সমাজেরই একজন সক্রিয় সদস্য, শামসুল হুদার হাতে আসে। দীর্ঘকাল অযত্নে পড়ে-থাকায় পোকায় কাটা বিবরণীর জীর্ণ খাতাটির বাঁধাই খুলে গিয়ে অবিন্যস্ত হয়ে পড়ে -পৃষ্ঠাও হয়ে ওঠে বিবর্ণ ও নরম। হয়তো আর কিছুকাল পরে এই মূল্যবান সাংস্কৃতিক উপকরণটির কোনো অস্তিত্বই বজায় থাকতো না। সেই বিবেচনায় ড. আবুল আহসান চৌধুরীর উদ্যোগে এই খাতাটির প্রতিলিপি সংস্করণ (ঋধপংরসরষব ঊফরঃরড়হ) পাঠক সমাবেশের সৌজন্যে প্রকাশিত হলো। শিক্ষিত বাঙালি মুসলমানের চেতনায় নাড়া দেওয়ার মতো একটি প্রতিষ্ঠানের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য দলিল প্রকাশের প্রয়োজন ও গুরুত্ব সুধীজন অনুধাবন করলে তা হবে এই কাজের যথাযথ স্বীকৃতি।
Author Biography
আবুল আহসান চৌধুরী মননসাহিত্যের এক সব্যসাচী লেখক। সমাজমনস্ক ও ঐতিহ্যসন্ধানী। বিচিত্র তাঁর রচনার বিষয়-আশয়। তাঁর চর্চা ও গবেষণার প্রধান বিষয় ফোকলোর, উনিশ শতকের সমাজ ও সাহিত্য, সাময়িকপত্র, আধুনিক সাহিত্য, আঞ্চলিক ইতিহাস ও সংগীত-সংস্কৃতি। অনুসন্ধিৎসু এই গবেষক সাহিত্যের নানা দুষ্প্রাপ্য ও বিলুপ্তপ্রায় উপকরণ সংগ্রহ করে তাঁর রচনায় ব্যবহার করেছেন। বিশেষ করে তাঁর লালন সাঁই, কাঙাল হরিনাথ ও মীর মশাররফ হোসেন-বিষয়ক গবেষণা-কাজ দেশে-বিদেশে সমাদর পেয়েছে। সংগ্রহ-সংকলন-সম্পাদনা করেছেন সাহিত্যসেবীদের মূল্যবান চিঠিপত্র, দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থ ও রচনাবলি। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৮০ পেরিয়ে গেছে। মুসলিম সাহিত্য সমাজ ও শিখাগোষ্ঠীর লেখক-ভাবুকদের সম্পর্কে আবুল আহসান চৌধুরীর আগ্রহের স্বাক্ষর মিলবে তাঁর বেশকিছু বই ও রচনায়। তিনি কাজী আবদুল ওদুদের পত্রাবলি ও অগ্রন্থিত-অপ্রকাশিত রচনা সংকলন করেছেন। তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে কাজী মোতাহার হোসেনের রচনাবলি, প্রবন্ধসংগ্রহ ও স্মারকগ্রন্থ। সংকলন করেছেন আবুল হুসেনের অগ্রন্থিত-অপ্রকাশিত রচনা। আলোচনা করেছেন মোতাহের হোসেন চৌধুরী সম্পর্কে। তাঁর সংগ্রহে আছে মুসলিম সাহিত্য সমাজ ও এই সংগঠনের লেখকদের দুষ্প্রাপ্য-অপ্রকাশিত-অগ্রন্থিত রচনা ও পত্রাবলি। এই ধারায় তাঁর সাম্প্রতিকতম কাজ মুসলিম সাহিত্য সমাজের সভার কার্যবিবরণী সংকলন-সম্পাদনা। আবুল আহসান চৌধুরীর জন্ম কুষ্টিয়ার মজমপুরে, ১৩ জানুয়ারি ১৯৫৩। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান), স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি। প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর অধ্যাপনা-পেশায় যুক্ত। বর্তমানে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রফেসর। সাহিত্যচর্চার জন্যে দেশ-বিদেশের নানা সারস্বত প্রতিষ্ঠানের সম্মাননা ও স্বীকৃতি পেয়েছেন। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য লালন পুরস্কার (পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য লালন মেলা সমিতি, ২০০০), বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার (কলকাতা, ২০০৮), মীর মশাররফ হোসেন পদক (কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন ও কুষ্টিয়া জেলা পরিষদ, ২০১২)। গবেষণাকর্মে অবদানের জন্যে অর্জন করেন বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার (২০০৯)।
Reviews
There are no reviews yet.