Description
ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে ওর একটা নিবিড় সম্পর্ক ছিল। যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী তখন সুব্রত এখানকার তথ্য ও জনসংযোগ দপ্তরের দায়িত্বে। আর রাজ্যের হোম ডিপার্টমেন্টের দায়িত্বও ছিল ওর। সেই সময়ে নানা কারণে ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে মাঝে মাঝেই ওর দেখা হত। ইন্দিরা ওকে বেশ পছন্দ করতেন। স্নেহের চোখে দেখতেন।
সাতাত্তর সালের আগে, যখন তিনি প্রধানমন্ত্রী, বিজয়ার পর দিল্লিতে ওঁর বাড়িতে আমরা গিয়েছিলাম। সঙ্গে একটা চওড়া পাড় ওয়ালা তাঁতের শাড়ি আর মিষ্টি
নিয়ে গিয়েছিলাম। তাঁতের শাড়িটা দেখে ওঁর খুব পছন্দ হয়েছিল। রেখে দিয়েছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে এটাও বলে দিয়েছিলেন, আমি না এত ভারি শাড়ি পরতে পারি না। তাই এই শাড়িটা আমি খুব বেশি যে পরতে পারব তা নয়। তোমরা এরপর যখন শাড়ি নিয়ে আসবে তখন আমার জন্য একটু হালকা দেখে সরু পাড়ের শাড়ি নিও।
আর একটা কথা মনে পড়ে গেল। তখন সুব্রত মন্ত্রী হয়েছে। তার পরপরই একবার দিল্লিতে গিয়েছিল ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে দেখা করতে। ইন্দিরা তখন ভীষণ ব্যস্ত। কিছুতেই আর সময় করে উঠতে পারছেন না। প্রণবদা যাওয়ার আগে ওকে বলে দিয়েছিল, তুই কলকাতা থেকে আসার সময় সিমলার কড়াপাকের সন্দেশ কিছু নিয়ে আসিস। ইন্দিরার খুব পছন্দ। ও তাই করেছিল। এক বাক্স ভালো কড়াপাকের সন্দেশ নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ওই যে বললাম, ইন্দিরা তখন এতই ব্যস্ত যে কিছুতেই ওর সঙ্গে দেখা করার সময় হয়ে উঠছিল না। খুব দৌড়াদৌড়ি করছেন। এখানে ওখানে ছুটছেন। তাই দিল্লিতে বসে বসে একটার পর একটা দিন কেটে যেতে লাগল। ইন্দিরার সঙ্গে আর দেখা হয় না। এদিকে যত দিন যায় এবেলা ওবেলা ততই কড়া পাকের সন্দেশ বাক্স থেকে কমে যেতে থাকে। ঘুরতে ফিরতে সুব্রত খেয়ে
নিত। যেদিন সময় ঠিক হল, সেদিন যাওয়ার আগে প্রণবদা ওকে বললেন, যাওয়ার সময় সন্দেশের বাক্সটা নিয়ে যাস। সন্দেশের বাক্স তখন কোথায়? তাতে হয়তো এক-আধখানা পড়ে আছে।
ও বলল, এবারে আর হবে না। সে সন্দেশ সব নষ্ট হয়ে গেছে। আমি ফেলে দিয়েছি।
প্রণবদা হেসে বলেছিলেন কোথায় ফেলেছিস, পেটে? সুব্রত তখন হেসে ফেলে।
সে যাত্রায় ইন্দিরাকে আর সিমলার কড়া পাকের সন্দেশ খাওয়ানো হয়নি।
**************************************
উদ্ধৃতাংশটি নেওয়া হয়েছে ছন্দবাণী মুখোপাধ্যায়ের লেখা ‘কাছের মানুষ সুব্রত’ বইটি থেকে ।
ভারতীয় রাজনীতির বর্ণময় চরিত্র সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ছয় দশক আগে ছাত্র রাজনীতির মধ্যে দিয়ে তাঁর রাজনৈতিক যাত্রা শুরু। শেষ করেছেন গত বছর কালীপুজোর দিন। পায়ের তলায় সরষে। সরকারি প্রতিনিধি, শ্রমিক নেতা হিসেবে এবং নিজের উদ্যোগে বহু দেশ ঘুরেছেন। দুটো গভীর ইচ্ছে ছিল ওঁর। এক, নিবিড়ভাবে নিজের দেশটাকে দেখবেন। আর দুই, নিজের অভিজ্ঞতার কথা লিখবেন নিজেই। উনি বলতেন, আমার আবেগ, আমার অনুভূতি অন্যলোকে কী করে বুঝবে! তাই আমাকেই আমার অভিজ্ঞতার কথা লিখতে হবে।
সেই ইচ্ছে ওঁর পূরণ হয়নি। আরও একটা ইচ্ছে পূরণ হয়নি ওঁর। বেলুড়ে ভরত মহারাজের কাছে দীক্ষা নিতে চেয়েছিলেন। হয়নি। লেখা হল না। তাই শেষ পর্যন্ত এই বর্ণময় চরিত্রের আখ্যান লিখলেন তাঁরই সহধর্মিণী ছন্দবাণী মুখোপাধ্যায়।
Reviews
There are no reviews yet.