Description
“মিশর দেশটা নিয়ে কৌতূহলী নয় এমন বাঙালি খুব কমই আছেন। সাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি পুরােনাে একটা সভ্যতা, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে কত ফারাও, কত দেবদেবীর নাম। পিরামিড, মমি, স্ফিংস এবং আরও কত কী! কত রােমাঞ্চকর সব আখ্যান জড়িয়ে রয়েছে এর ইতিহাসের সঙ্গে। আবার হুগলি নদীর তীরের কলকাতা শহরে ছড়িয়ে রয়েছে অজস্র মিশরীয় মণিমাণিক্য। তার খবরই-বা ক-জন রাখেন! হায়রােগ্লিফের দেশে নিয়ে এল সেইসব গল্প যার কিছু কিছু জানা এবং বেশির ভাগই অজানা ইতিহাসের শুকনাে কচকচি নয়, বরং স্বাদু অথচ সহজপাচ্য গল্পের আকারে বলা এক হারিয়ে যাওয়া সময়ের কথাই এই বইয়ের মূলধন। তার সঙ্গে আছে ২৫০-র বেশি ছবি, যার বেশ কিছু দুর্লভ, দুষ্প্রাপ্য। এমন বই বাংলা ভাষায় খুব কমই আছে।”
Sruti Misra –
বই: হায়রোগ্লিফের দেশে
লেখক: অনির্বাণ ঘোষ
প্রকাশনী: বুক ফার্ম
মুদ্রিত মূল্য: ৩৯৫/-
সেই ছোটবেলায় পড়েছিলাম, “মিশর নীল নদের দান” আর তার সাথে ইতিহাস বইয়ের পাতায় দেখেছিলাম পিরামিডের ছবি। এই আমার প্রথম পরিচয় মিশরের সাথে। তারপর দেখে ফেললাম, হলিউডের সেই বিখ্যাত সিনেমা। দেখেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছিলাম। সিনেমা দেখার পরই ঠিক করেছিলাম, জীবনে একবার না একবার পিরামিডের সামনে দাঁড়িয়ে একটা ছবি তুলে আসবো। ছাই পাশ ভাবার জন্য তো আর ট্যাক্স লাগে না, কোনো বয়স সীমাও নেই। তাই আমিও মনের সুখে রাতের স্বপ্নে পিরামিডের মধ্যে ঢুকে পড়তাম। এই দেশ নিয়ে আগ্রহ কম বেশি কার নেই বলুন তো? যখন দেখলাম, বাংলায় এরকম একখান বই রয়েছে, যাতে কিনা আমার স্বপ্নের দেশ নিয়েই লেখা, আমি ঝপ করে কিনে ফেললাম।
এই বই এক কথায়, প্রচুর অজানা তথ্যের সমাহার। যারা মিশরের ইতিহাস সম্পর্কে একদমই অবগত নন, কিন্তু জানতে ভীষণ আগ্রহী, তাদের জন্যে এই বইটি পারফেক্ট। সহজ সরল ভাষায়, গল্পের মাধ্যমে এমনভাবে তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে, পড়তে গিয়ে একবারের জন্যেও বোর হবেন না। বরং আরও আগ্রহ বাড়বে। লেখক এখানে তিনটি মূল চরিত্রের সাথে পাঠকদের পরিচয় করিয়েছেন। পিজি এবং স্পন্দন নামে দুই মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র এবং কলেজ স্ট্রিটের এক বই বিক্রেতা ভবেশদা। ভবেশদা কখনো দিলখুশার ফিশ কবিরাজি, কখনো অনাদির মোগলাই, কখনো বই পাড়ার চায়ের দোকানে চা খেতে খেতে গল্পের মাধ্যমে মিশরের টুকরো টুকরো ছবি তুলে ধরেছেন পিজি আর স্পন্দনের সামনে। স্কুপ, কালিকাতেও কখনো কখনো আড্ডা জমিয়েছেন তিনজন মিলে। প্রথম দিকে গল্পের এই ধাঁচটা একইরকম হয়ে গেলেও (যেমন ভবেশদাকে কিছু খাওয়ানোর পরেই তাকে দিয়ে গল্প বলানো) পরে গিয়ে বদল হয়। পিজি কিন্তু ভারী মজাদার একটি চরিত্র। আমাদের প্রত্যেকেরই কলেজ জীবনে পিজির মত একখান বন্ধু ছিলো।
এই বইটি ২৫টি অধ্যায়ে বিভক্ত। মিশরের বিভিন্ন দেব দেবীর কথা, ফারাওদের ইতিহাস, মমিকে কিভাবে সংরক্ষণ করা হত, আর্কিওলজিস্টদের অভিজ্ঞতা, তারা কিভাবে কোথায় কিসের সন্ধান পান, লিপি কিভাবে উদ্ধার হয় সব গল্পের আকারে লিখেছেন অনির্বাণ বাবু। শুধু লন্ডন এবং কায়রোর মিউজিয়ামেই নয়, আমাদের কলকাতা শহরের বুকেও সামান্য ছিটে ফোঁটা রয়েছে মিশরের ঐতিহ্যের। আবার মেডিক্যাল কিছু টার্মিনোলজির সাথেও মিশরের ইতিহাস জড়িত।
এছাড়াও এই বইতে রয়েছে বেসিক হায়রোগ্লিফিক সাইন। আমি তো ভারী মজা পেয়েছি এই সাইনগুলো বইতে থাকায়। আমার খুব কাছের মানুষদের নাম হায়রোগ্লিফে লিখে তাদের ইনবক্স- এ পাঠিয়ে তাক লাগিয়ে দিচ্ছিলাম রীতি মতো। তবে এত কিছুর মধ্যে এই বইয়ের সবথেকে আকর্ষণীয় বিষয় কি জানেন? এই বইতে রয়েছে ২৫০ রও বেশি দুর্লভ কিছু সাদা কালো ছবি, যা প্রতি পাতায় পাঠকদের মুগ্ধ করার জন্যে যথেষ্ট। তবে এই গল্প শেষের দিকে এমন রহস্যের মধ্যে আমাকে ছেড়ে দিয়ে গেলো, মন ভারী অশান্ত লাগছে, তবে পরবর্তী বইয়ের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো উপায়ও নেই আর।
আপনারা আশা করি, অনেকেই হায়রোগ্লিফের দেশ ইতিমধ্যে ঘুরে ফেলেছেন অনির্বাণ বাবুর কৃপায়। আপনাদের অভিজ্ঞতা অবশ্যই জানাবেন।
আমি বলবো, এই বইটি সত্যিই নিজেদের সংগ্রহে রাখার মত।
সকলে সাবধানে থাকুন আর প্রচুর ভালো বই পড়ুন।
ধন্যবাদ