Description
জগদীশ বলেন, আচ্ছা, হীরালাল বলে কে একজন একটি কাব্যগ্রন্থ লিখে রাজরোষে পড়েছিল, তোমাকেও নাকি কোর্টে ছুটতে হয়েছিল!
হ্যাঁ, সে এক কাণ্ড! বেশ কয়েকমাস আগের কথা, হীরালাল সেনগুপ্ত ‘ হুংকার’ নামে একটি গানের বই লিখে আমায় উৎসর্গ করে, আমি আগে জানতুম না, পরে বইটি পেয়ে একটি চিঠি লিখে দেশের কাজে এত উত্তেজনাময় হুংকার না ছেড়ে ধীরস্থির ভাবে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছিলুম! বইটিতে সে নিজের গানের সঙ্গে ‘বন্দেমাতরম’ এবং আমার ‘ বাংলার মাটি বাংলার জল’ গানটিও সংযুক্ত করে। সরকার বইটি বাজেয়াপ্ত করে।আর চিঠিটিও তাদের হাতে পড়ে। আমায় সরকার পক্ষের সাক্ষী হিসেবে ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে ডাকা হয়।
আচ্ছা! তারপর?
আমার সাক্ষ্য সরকার পক্ষে যায়নি, আমি বলেছিলুম, স্বাধীনতাকাঙ্ক্ষী বাঙালি যুবকের পক্ষে উত্তেজক কবিতা বা গান লেখা আদৌ অস্বাভাবিক নয় আর ওকালতি আমার পেশা নয়, সুতরাং কবিতা বা গান কী পরিমাণ উত্তেজক হলে সেটা আইনত দণ্ডনীয় হবে সেটা আমার জানা নেই!
বাঃ! ভালোই বলেছ, তো― সেই ছেলেটির কী হল?
তার আঠারো মাসের জেল হয়েছে। আমি অবশ্য বলে এসেছি মুক্তির পর শান্তিনিকেতনে আসতে, বিদ্যালয়ের কাজে লাগতে।
অথচ এমন অপপ্রচার আমার কানে এসেছে তুমি নাকি এমন সাক্ষ্য দিয়েছ যে তার জেল হয়ে গেছে!
আরে, সাক্ষী কি আমি একা ছিলাম? আরও কতজন ছিল, তা ছাড়া বিচার কি শুধু সাক্ষীর উপর নির্ভর করে―আইনের কত মারপ্যাঁচ, জানোই তো! তবে আরও একটা ব্যাপার কানে এসেছে আমার―
কী?
ছোটোলাট অ্যান্ড্রু ফ্রেজারের নাকি মতলব ছিল হীরালালের সঙ্গে আমাকেও আসামি করে মামলা শুরু করা!
বলো কী!
হ্যাঁ, কিন্তু সরকারি উকিলরা না কি বলেছিলেন যে অভিযোগ টিকবে না, বরং গোটা মামলাটাই ফেঁসে যাবে!
সরকার খুব মরিয়া হয়ে উঠছে! গত দুবছর কত কিছু ঘটে গেল! আলিপুর বোমার মামলায় তো ফাঁসির আদেশ হয়েছে দুজনের, তাই তো? বারীন্দ্র আর উল্লাসকর।
হ্যাঁ, ওরা হাইকোর্টে আপিল করেছে। এই যে উল্লাসকর নামে ছেলেটি―
কবি চুপ। সন্ধে নেমেছে, মেঘমুক্ত আকাশ, হালকা জ্যোৎস্না। বাতাসে হিমের ছোঁয়া।
জগদীশ বলেন, কী হল? থামলে যে? উল্লাসকরকে চিনতে তুমি?
না, চিনতুম না, কিন্তু একটা ঘটনা― কোর্টে আলিপুর বোমা মামলা চলছে অনেকদিন ধরে, একদিন, দিনটি ছিল শুক্রবার, কোর্ট বসার আগেই সুরেলা-উদাত্ত কণ্ঠে গান ধরলেন এক যুবক, কোর্টরুম থেকে বারান্দা সর্বত্র মূহুর্তে নিঃশব্দ, এমনকি ইংরেজ সার্জেন্টও আ্যটেনশন হয়ে অখণ্ড মনোযোগে শুনছেন সেই গান― উল্লাসকর দত্ত গাইছেন, সার্থক জনম আমার…
বলছ কী! আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে!
পরদিন ‘দ্য বেঙ্গলি’ পত্রিকায় পুরো সংবাদটি ছাপা হয়, সঙ্গে আমার গানের ইংরেজি অনুবাদ!
এটাই তোমার গানের প্রথম প্রকাশিত অনুবাদ, তাই না? কে করেছেন?
সে আর জানা হয়নি। উল্লাসকরের মতো তরুণদের হিংসার পথ আমি সমর্থন করি না ঠিকই, কিন্তু এদের সাহস আর আত্মত্যাগকে সম্মান না জানিয়ে পারি না, এ ত্যাগ বৃথা যাবে না, যেতে পারে না!
তারপর কিছুক্ষণ কবি চুপ, জগদীশও। জল থইথই পদ্মা, বাতাসের বেগ বাড়ে, হাওয়ায় হাওয়ায় পদ্মার জলে নাচন।
#রবীন্দ্রজীবন নির্ভর উপন্যাস সুকান্তি দত্তের #দুঃখরাতের_আনন্দগাথা থেকে।
প্রকাশক – অভিযান পাবলিশার্স
Reviews
There are no reviews yet.