Description
বঙ্গোপসাগরের মোহনায় একটি চর জেগেছিল, যেটি বছরে ছমাস মনুষ্য বসবাসের উপযোগী হয়ে ওঠে। নভেম্বর থেকে এপ্রিল। কার্তিক থেকে থেকে চৈত্র। বর্ষায় ডুবে যায় সমুদ্রের জলে। ধনপতি বুড়ো এক মৎস্যজীবী, সে-ই চরটিকে খুঁজে পেয়েছিল। সে নিজেকে ওই চরের মালিক বলে ঘোষণা করেছিল। চরটিতে কার্তিক মাসে মৎস্যজীবীরা ছমাসের জন্য মাছ ধরতে উপস্থিত হয়। তারা সেখানে একটি ছমাসের সংসার বানায় ভবঘুরে দরিদ্র যে মেয়েরা সেখানে ভাতের জন্য, কাজের জন্য উপস্থিত হয়, তাদের সঙ্গে। ধনপতির চরের এই ছ’মাসের পৃথিবীতে পুলিস, অসৎ সরকারি কর্মচারী এবং নারী পাচারকারীরা আসে গন্ধে গন্ধে। ছ-মাস যায়। চৈত্রে সমুদ্র এবং নদী অশান্ত হয়ে মৎস্যজীবীরা ফিরে আসে মূল ভূখন্ডে। মেয়েরাও ফিরে যায় খাদ্যের সন্ধানে অন্যত্র। ধনপতি বুড়ো নিজেকে বলে এক পর্তুগীজ হার্মাদ পেদ্রোর বংশধর। বাংলার সমুদ্র উপকূল এক সময় পর্তুগীজ জলদস্যুদের অত্যাচারে বিনষ্ট হয়েছিল। এক জলদস্যু, হার্মাদ ছিল পেদ্রো। চরটি সম্পর্কে এক কিংবদন্তী ছিল চর পিঠে নিয়ে ঘুমিয়ে আছে এক অতিকায় কাছিম। কাছিমের নাম পেদ্রো-ধনপতি। কাছিমটি এসেছিল দূর লিসবন- পর্তুগাল থেকে। কাছিমরা আটলান্টিক সাঁতরে সমুদ্রপথে ভারত মহাসাগর হয়ে বঙ্গোপসাগরের চরে আসে ডিম পাড়তে। এই সত্যের সঙ্গে মিশেছে ধনপতি হার্মাদের কিংবদন্তী এবং কাছিম পেদ্রোর কিংবদন্তী। চরের মানুষ বিশ্বাস করে ধনপতি কাছিম ঘুমিয়ে আছে চর পিঠে নিয়ে সমুদ্রের অতলে। যদি সে জাগে, তাহলে আবার যাত্রা করবে নিজের হোম ল্যান্ড, লিসবনের দিকে। বুড়ো ধনপতিরই কথা এইটা।
কাত্তিক পুন্নিমে তিথি, চাঁদেরও আলাে।
দেখি নাও ধনপতি, কারে লাগে ভালাে।
ধনপতি একজন, জলেতে ঘুমায়,
ধনপতি আরজন গাঙেতে ভাসায়।
ধনপতি সব জন, জাগে নিশিদিন,
কুমির গিলিয়া খায় সাগরের মীন।
সত্তর বছরের বুড়োর একটি বিবি হয়েছে, বছর উনিশের কুন্তি। সন্ধ্যায় বুড়ো ধনপতি চরের মানুষ, নারী পুরুষকে তার জীবনের অভিজ্ঞতার কথা বলে। দূর লিসবনের কথা বলে। বলে আকাশ ভরা সূর্য তারার কথা, পূর্ব পুরুষের শৌর্য বীর্যের কথা। ধনপতিবুড়ো নিজেকে এই চরের মালিক দাবি করলেও, আইনত এর মালিক সরকার। সরকারের মনে হয় চরটি বাঁধ দিয়ে ঘিরে উন্নয়ন করবে। এখানে একটি টুরিস্ট সেন্টার গড়ে তুলবে। বিনোদনের ব্যবস্থা করবে, তাতে সরকারের আয় হবে। সেই কারণে পুলিশ এবং সারভেয়র পাঠিয়ে জরিপ করায় সরকার। ম্যাজিস্ট্রেট নোটিস পাঠায় চরের জমি অধিগ্রহণের। চর অধিগ্রহণ করে উচ্ছেদ করবে মৎস্যজীবীদের। চর ছেড়ে দিতে মাইকিং করে। নিরূপায় মানুষ তখন সমস্ত রাত ধরে কাছিম ধনপতির ঘুম ভাঙাতে প্রার্থনা করতে থাকে। ধনপতি তুমি জাগো। জেগে উঠে আমাদের বাঁচাও।
পরদিন সরকারের সারভেয়র এবং ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশ লঞ্চে করে চর দখল করতে এসে চরকেই খুঁজে পায় না। সবদিকে ধু ধু সমুদ্র। চর পিঠে নিয়ে কাছিম ধনপতি, পেদ্রো ধনপতি লিসবনের দিকে রওনা হয়ে গিয়েছিল হয়ত আগের রাতে জেগে উঠে। বাংলা সাহিত্যের একটি অনন্য ক্লাসিক উপন্যাস।
Reviews
There are no reviews yet.