Additional information
Publisher | |
---|---|
Binding |
₹550 Original price was: ₹550.₹495Current price is: ₹495.
ওয়াজিদ আলি নবাব নন, রাজা। এই ভুল সকলে করে থাকেন।
শামিম আহমেদ-এর সুবৃহৎ উপন্যাস “আখতারনামা” (রাজা ওয়াজিদ আলির জীবনীমূলক উপন্যাস) পড়ার আগে জেনে নিন।
******************************************************************************
।।রাজকাহিনি।।
নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ। লখনউয়ের তখ্ত ছেড়ে শেষজীবন কাটান মেটিয়াবুরুজে। তখনও তাঁর পশুশালায় বাঘ,চিতা, সিংহ। অন্দরে বেগম তিনশো পঁচাত্তর জন। নবাবমহল দেখে এলেন শঙ্করলাল ভট্টাচার্য।
————————————————————————–
১৮৭৪ সালের শরতে আমেরিকার বিখ্যাত একটি দৈনিকপত্রের এক প্রতিবেদন বলছে যে, কিছু আইনি ব্যাপার ছাড়া ব্রিটিশদের কোনও মাথা গলানো চলে না অবধের প্রাক্তন নবাবের গড়ে তোলা এই নকল রাজত্বে।
সে-রাজত্ব ছোট। কিন্তু আঁটোসাঁটো। ছ’হাজার প্রজা নিয়ে দিব্যি চলে রাজ্যপাট। মাসিক এক লক্ষ টাকার পেনশনে নবাবের খাইখরচার শেষ নেই। ফলে ধারকর্জও বেলাগাম। তাই ধার মেটানো, ভাতা বাড়ানো নিয়ে সাহেবদের সঙ্গে আকচাআকচিও অবধারিত।
লখনউ ছেড়ে আসার সময় তাঁর অসংখ্য বেগমের একটা বড় অংশ নবাবের সঙ্গে কলকাতা পাড়ি দেন। পরেও চলে আসেন অনেকে (জীবনের শেষ অবধি ওঁর স্ত্রীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ৩৭৫!)।
সঙ্গী আমির-ওমরাহ, পাইক-বরকন্দাজ, খিদমদগার, গাইয়ে-বাজিয়ে-নর্তকীদের সংখ্যাও তাজ্জব করা।
কিন্তু এই ছোট্ট রাজত্বকে এক আরব্যরজনীর আবেশে বেঁধেছিল নবাবের নিজস্ব চিড়িয়াখানা।
সেই চিড়িয়াখানার পিছনেই ওয়াজিদ আলি শাহের মাস গেলে খরচ ন’হাজার টাকা। কারণ হাজার হাজার পাখপাখালি ছাড়াও (শুধু পায়রাই ২৪ হাজার) সেখানে পোষা হত তেইশটি বাঘ, সিংহ ও চিতা!
• কলকাতায় তোপধ্বনি তিনি এলেন শহরে
১৮৫৬-র ৪ ফেব্রুয়ারি জেমস উট্রামের হাতে তাঁর মাথার তাজ তুলে দিয়ে নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ আত্মীয়স্বজন সমেত লখনউ ছেড়ে কলকাতার পথে জাহাজ নিলেন।
১৩ মে পৌঁছলেন শহরে। ৩ জুন তারিখে এলেন গার্ডেনরিচে।
তখ্ত গেছে, রাজ্য থেকেও সরে এসেছেন। তবুও একুশটি তোপধ্বনিতে তাঁর কলকাতা আগমনকে সম্ভাষণ জানানো হয়েছিল।
তবে এই ‘গান স্যালুট’ ছিল তাঁর জীবনের শেষ গান স্যালুট; এর পর আর কখনও তাঁকে অভিবাদন জানানো হয়নি।
সে-সময়কার ভারতশাসক আর্ল মেয়োকে এক বার নবাব প্রস্তাবও দিয়েছিলেন, তাঁকে যেন সেই একুশটি গান স্যালুট থেকে বঞ্চিত করা না হয়। সে অনুরোধ কখনও রাখা হয়নি।
আজ কেন যেন হাঁটতে হাঁটতে মনে হচ্ছে সেই গার্ডেনরিচ খুঁজে পাচ্ছি না! কে আর আশা করে যে বাড়ির পর বাড়ি থেকে গান আর নাচের আওয়াজ ঠিকরে বেরবে! বিযয়টা এত সরলীকৃত নয়, কিন্তু সংশয়ের উত্তর দিল এই পরিক্রমাই।
তাকিয়ে দেখছিলাম নবাবের ‘রানিমহল’। যার কোনও শোভা বলতে কিছু নেই আজ। শুধু তার একটা ভাড়া পান স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটি। আরেকটা হোঁচট খেতেই হয়— তল্লাট জুড়ে জিনিসপত্রের দর হাঁকাহাকিতে। অথচ নবাব কিন্তু এখানেই প্রায় বানিয়ে ফেলেছিলেন তার দ্বিতীয় লখনউ! আসল লখনউ ছাড়ার শোক কখনওই মুছতে পারেননি, তবু!
আফশোস করে বলেছিলেন, ‘‘একটা সময় ছিল, যখন আমার পায়ের তলায় থোকা থোকা মুক্তো চাপা পড়ত। এখন শুধু ওপর থেকে এক নিষ্ঠুর রোদ আর পায়ের তলায় কাঁকর।’’ —এই ২০১৫-য় তাঁর ফেলে যাওয়া স্মৃতির মহলে ঘুরতে ঘুরতে (শাহি ইমামবাড়ায় কবরস্থ আছেন স্বয়ং নবাব, তাঁর পুত্র বির্জিস কাদের, শোভা পাচ্ছে নবাবের মসনদ, যেটি তুলে নিয়ে গিয়ে ‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’-র শ্যুটিঙে ব্যবহার করেছিলেন সত্যজিৎ রায়) যা দেখি তাতেই মগজে ভিড় করে রাশি রাশি গল্প।
চলুন গল্পে যাই, যা আসলে স্পন্দমান ইতিহাস।
নবাবের প্রধানা স্ত্রী বা খাস মহলেরও একটা ছোট দরবার ছিল। সেখানে দর্জি, ধোপানি, ধাই। চাকরানি, হুকাবরদার, পঙ্খাওয়ালি, পানওয়ালি ছাড়াও ছিল গল্প শোনানোর মেয়েরা। অন্য রানিদের বন্দোবস্ত কিছু কম যায় না। তাতেও অজস্র রানিতে খেয়োখেয়ি, ঝগড়াঝাঁটি, লাগানো-ভাঙানো, মন্দ সম্পর্কের শেষ নেই।
একটা সময় এল যখন চার দেওয়ালের মধ্যে হাঁসফাঁস-করা অনেক বেগমই লখনউ ফিরে যাবার উদ্যোগ করেন। অনেকে পরে ফিরেও আসেন, রাজ্যচ্যূত নবাবের যে কিছু কম আকর্ষণ ছিল না বেগমের কাছে। ১৮৫৯-এর শরতে প্রথম মেটিয়াবুরুজ ছাড়েন ছোটি বেগম।
আর ওই ১৮৫৯-এর ১৬ নভেম্বর ফোর্ট উইলিয়ামের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাওয়ার আহ্লাদে একই দিনে তিনটে নতুন বিয়েও করেন নবাব।
মেটিয়াবুরুজে একত্রিশ বছরে কম বিয়ে করেননি তিনি। আর এই নতুন বেগমদের অনেককেই আনা হয়েছে ওঁর প্রিয় লখনউ থেকে।
মেটিয়াবুরুজের ইমামবাড়ায় তাঁর শতেক বেগমের মধ্যে কেবল একজনেরই প্রতিকৃতি শোভা পায়। ম্যানেজারের ঘরের দেওয়ালে। বেগম হজরত মহল।
তাঁর নিকাহ্ করা তিন বেগমের একজন। যিনি নবাব কলকাতা এলে তার সঙ্গী হননি, কারণ তত দিনে নবাব ওঁকে তালাক দিয়েছেন। নবাবকে সরিয়ে ব্রিটিশরা মহাবিদ্রোহ সামাল দিতে ব্যস্ত হতেই প্রস্তাব আসে নবাবের তখতে— নতুন কাউকে বসানোর। তাতে বেগম হজরত মহল তাঁর গর্ভে নবাবের বারো বছরের পুত্র বির্জিস কাদেরকে বসিয়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামার তোড়জোড় শুরু করেন।
১৮৫৮-র ফেব্রুয়ারিতে ব্রিটিশ বাহিনী লখনউয়ের ওপর চড়াও হলে দু’সপ্তাহ ধরে মরণপণ যুদ্ধ চলে লখনউয়ের বুকে।
শেষে শহরটা ইংরেজদের ফের কব্জায় আসতে হজরত মহল, বালক পুত্রকে সঙ্গে করে কাঠমাণ্ডু পালিয়ে যান। এবং সেখানেই বাকি জীবন কাটে।
এই সেদিন নেপালের ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পে কাঠমাণ্ডুর অজস্র স্থাপত্যের সঙ্গে হজরত মহলের সমাধিটিও ধূলিসাৎ হয়।
পুত্র বির্জিস এক সময় চলে আসেন মেটিয়াবুরুজে এবং এখানেই প্রয়াত হয়ে পিতার সঙ্গে কবরস্থ আছেন এক ছাদের তলায়। অর্থাৎ গার্ডেনরিচের সিবতৈনাবাদ ইমামবাড়ায়।
ইমামবাড়ার প্রধান হল-এর বাঁ হাতের কাচ আর লোহার শিকে ঘেরা ঘরটায় কবরস্থ আছেন অবধের শেষ নবাব। যাঁকে এক ব্রিটিশ ঐতিহাসিক বলেছেন ‘দ্য লাস্ট কিং ইন ইন্ডিয়া’। হঠাৎ এক প্রদেশের শেষ নবাবকে ‘ভারতের শেষ রাজা’ বলা কেন? উত্তর, ‘‘মনে হল বইয়ের নামকরণে ওই বর্ণনাটাই বেশি মানায়।’’ আসলে নবাব ওয়াজিদ আলি শাহের সঙ্গে এই ‘শেষ’ কথাটা অদ্ভুত মসৃণতায় জুড়ে গেছে।
মাত্র ন’বছরের নবাবি সাঙ্গ করে রাজ্য ছাড়া হয়ে যিনি তাঁর অমরগীতি রচনা করলেন ‘যব ছোড় চলি লখনউ নগরী’, লখনউ হারিয়ে তিনিই আবার নতুন করে লখনউ গড়লেন গঙ্গার পাড়ে। ফোর্ট উইলিয়ামে দু’ বছরের কারাবাসে এক মসনবি বা দীর্ঘ কবিতায় নিজের পতন ও বেদনার বৃত্তান্ত লিখলেন। সে-রচনার নাম রাখলেন ‘হুজ্ন-ই-আখতার’ বা ‘আখতারের দুঃখ’। ভারতের শেষ বাদশাহ বাহাদুর শাহ দিল্লি থেকে বিতাড়িত হয়ে জাহাজে করে বর্মার রেঙ্গুনে আশ্রয় নিতে যাবার পথে তরী থামালেন গার্ডেনরিচে। সে-শুধু সুলতানখানার বারান্দায় দাঁড়ানো নবাবকে দূর থেকে হাত নেড়ে অভিবাদন জানাবেন বলে।— এই ওয়াজিদকে ‘শেষ রাজা’ বলে ডাকারও একটা সমীহের ইতিহাস তৈরি হয়ে আছে!
In stock
Publisher | |
---|---|
Binding |
You must be logged in to post a review.
Reviews
There are no reviews yet.