Description
রাজনৈতিক ইতিহাসের মতোই বাংলার ধর্মজীবনের ইতিহাসও সুপ্রাচীন। বৈদিক ধর্ম ও আদিম লোকধর্মের সংমিশ্রণে বাংলায় গড়ে উঠেছে এক সুদৃঢ় মিশ্র সংস্কৃতি। বৌদ্ধ, তন্ত্র এবং আধুনিক ইসলাম ধর্মের সাথেও ক্রমাগত চলেছে দেওয়া নেওয়ার পালা। কিন্তু জৈন ধর্ম? বাংলার সাথে জৈন ধর্মের সম্পর্ক ঠিক কী রকম? এ নিয়ে বাংলায় উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের অভাব রয়েছে। সেই অভাব কিছুটা হলেও পূরণ করবে শ্রীযুক্ত রজত পালের সদ্য প্রকাশিত গ্রন্থ ‘বঙ্গে প্রাচীন জৈনধর্ম: ইতিহাস, গল্প ও প্রত্নকথা’।
উনিশটি অধ্যায়ে বিভক্ত এই গ্রন্থের প্রথম আটটি অধ্যায় জুড়ে রজতবাবু আলোচনা করেছেন জৈন ধর্ম ও দর্শন সম্পর্কে।
অধ্যায় বিভাগগুলো হল–
১. ভদ্রবাহুর কথা
২. জৈন ধর্মের ইতিহাস
৩. জৈন দর্শন
৪. কালচক্র ও মেরু পরিবর্তন
৫. সল্লেখন বা সান্থার
৬. তীর্থঙ্কর
৭. কুলকর ও শলাকাপুরুষ
৮. পৌণ্ড্র বাসুদেবের কথা।
এরপর নবম অধ্যায় থেকে রজতবাবু অনায়াস দক্ষতায় ধীরে ধীরে উন্মোচিত করেছেন বাংলার জৈন ধর্মের সাথে নিবিড় সম্পর্কের কথা। রাঢ় এর ইতিহাস নিয়ে যাঁরাই চর্চা করেছেন তাঁরাই এখানকার প্রাচীন ইতিহাস শুরু করেছেন জৈন আচারঙ্গ সুত্রে পাওয়া মহাবীরের বাংলা ভ্রমণে এসে এখানকার অধিবাসীদের হাতে নিগৃহীত হওয়ার কাহিনী থেকে। বর্ধমান সংলগ্ন অঞ্চলে তিনি এসেছিলেন– এমনটাই অনুমান। কিন্তু শুধুই কি বর্ধমান? জৈন গ্রন্থ থেকে পাওয়া বাকি স্থানগুলোর অবস্থান বাংলার ঠিক কোথায়? রজতবাবুর এই স্থানানুসন্ধান এই গ্রন্থের অমূল্য সম্পদ। এরপর রজতবাবু বাংলার জৈন প্রত্নক্ষেত্র নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। পুরুলিয়া জেলায় দামোদর নদে তলিয়ে যাওয়া জৈন পুরাতত্ত্ব ক্ষেত্র তেলকূপী থেকে শুরু করে পাকবিড়রা, দেউলভিড়া, অন্যদিকে বর্ধমান জেলার সাত দেউলিয়ার মতো জৈন পুরাতত্ত্ব ক্ষেত্র…, বাদ যায় নি কিছুই। জৈন পুরাতত্ত্ব ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে অনিবার্যভাবেই উঠে এসেছে জৈন মূর্তিতত্ত্ব ও দেবদেবীদের কথাও। এছাড়াও আলোচিত হয়েছে বাংলার সরাক জাতির কথা। অনেক গবেষকের মতেই জৈন ‘শ্রাবক’ থেকেই ‘সরাক’ শব্দটির উৎপত্তি। রজতবাবু এই সরাক জাতি নিয়েও উল্লেখযোগ্য আলোচনা করেছেন। পুস্তকের একেবারে শেষ দিকে ‘সম্মেদ শিখর প্রশ্ন’ নামক অধ্যায়টি আমাদের চমৎকৃত করে। আরও একটি বিষয়ের অবতারণা এই গ্রন্থটিকে সমৃদ্ধ করেছে বলে আমার বিশ্বাস। সিন্ধু সভ্যতার সাথে বাংলার জৈন ধর্মের সম্পর্ক কী? আচ্ছা জৈন ধর্ম কি অনার্যদের ধর্ম? নাঃ, বর্ধমান মহাবীর নিঃসন্দেহে আর্যসন্তান। আর জৈন ধর্মের অহিংসা তত্ত্বে অতিরিক্ত বিশ্বাস বাংলায় সেভাবে জনপ্রিয় না হলেও বাংলার জৈন পুরাতত্ত্ব ক্ষেত্রের সংখ্যা একেবারেই খুব কম নয়।রজতবাবু বলেছেন যে আর্য-অনার্যের কথা বা আর্যদের ভারত আক্রমণের কথা জৈন গ্রন্থে নেই। অজয় নদের তীরে ১৫০০ থেকে ৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে অনেকগুলি তাম্রাশ্মীয় যুগের বসতি আবিষ্কৃত হয়েছে। তাঁদের সাথে সিন্ধু সভ্যতার কি কোনও যোগসূত্র রয়েছে? এ প্রশ্নও তুলেছেন লেখক।
Reviews
There are no reviews yet.