Description
অদ্ভুত হত্যাকান্ড, পুরোনো কলকাতা, জাদুবিদ্যা, গুপ্তসমিতি আর একশো বছর বাদে ঘটে চলা বিচিত্র খুন নিয়ে রোমহর্ষক ডিটেকটিভ উপন্যাস।
প্রথম অধ্যায়ের প্রথম অনুচ্ছেদ থেকেই এই বই কোলকাতার তথা বাঙালির ইতিহাস অনুসন্ধিৎসু পাঠকের মননকে চুম্বকের মত আকর্ষণ করবে। আর একবার হাতে তুলে নিলে রক্ষে নেই!শেষ না করে ছাড়তে পারবেন না। সেই ফেলুদা যেমন বলেছিলেন, ‘আনপুটডাউনেবল’, এ বই সত্যিই তাই। ‘আরক্ত চোখে বিনীদ্র রজনী’ কাটিয়ে পড়ে ফেললেম পুরোটাই। শেষ করার পর মনে হল, ‘সূর্যতামসী’ নিয়ে কিছু কথা বলতেই হবে। তবে এখনও যারা বইটি পড়েননি, তাঁরা নিশ্চিন্ত থাকুন, এ লেখায় কোনও ‘স্পয়লার’ নেই। যা লিখছি তা শুধুমাত্র ‘আ্যপিটাইজ়ার’এর কাজ করবে। আগামীতে একটা ডিটেল রিভিউ লেখার ইচ্ছে থাকলো। আপাতত একটা সংক্ষিপ্ত আলোচনা করছি।
প্রথমেই আসি আঙ্গিকের প্রসঙ্গে, বইটি দুটো আলাদা আলাদা ‘টাইমলাইন’কে ধরে এগিয়েছে, একটি শুরু হচ্ছে ১৮৯২ সালে আর অপরটি ২০১৮ সালে। দুটি আলাদা যুগ, আলাদা ভাষা, আলাদা আদপ কায়দা, প্রাকৃতিক ও আর্থ-সামাজিক পরিবেশকে লেখক ভীষণ যত্ন সহকারে সুনিপুন দক্ষতায় ফুটিয়ে তুলেছেন। প্রচণ্ড পরিমাণ গবেষণা আর তথ্যের মাধ্যমে সাহিত্য রসিকের ‘নোলা’ তৃপ্ত করে করার অসাধারণ ক্ষমতার পরিচয় লেখক ইতিপূর্বেই দিয়েছেন, এই গ্রন্থও তার ব্যাতিক্রম নয়।
টেরিটি বাজার, সোনাগাছি, লালবাজার, গঙ্গার ঘাট, চন্দননগর সহ অজস্র এলাকার বর্ণনা ও পূর্ব ইতিহাসের হাত ধরে ফিটন গাড়ীর শব্দ, পাল্কীর দুলকি চালে আর হলদে গ্যাসবাতির মায়াময় আলোয় এ কাহিনী পাঠককে হাত ধরে একটা সম্পূর্ণ আলদা যুগে নিয়ে যাবে। বর্ণে গন্ধে স্বাদে সে এক আলাদা জগৎ যেন।পাঠকের মনে হবে যেন তিনি ভিক্টোরিয়া মেমরিয়ালের দেয়ালে ঝোলানো পেল্লায় পেল্লায় পেইন্টিং এর ভেতরে ঢুকে পুরনো কোলকাতায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ইতিহাসের চরিত্ররা সেখানে রক্ত মাংসের মানুষ। বাংলা সাহিত্য যে অনেকদিন এমন পুরনো বৈঠকি মেজাজের অথচ গভীরতা যুক্ত লেখা পায়নি, পাঠক মাত্রেই তা স্বীকার করবেন। আর তার সাথে আছে হত্যা ষড়যন্ত্র আর গুপ্ত-সমিতি, এক বিখ্যাত (নাকি কুখ্যাত বলব!) আন্তর্জাতিক ভ্রাতৃ সংঘ ও তাদের গুপ্ত সঙ্কেত আর ভারতীয় ম্যাজিকের এক আশ্চর্য জগৎ। প্রাচীন বৌদ্ধ শাস্ত্র ও সভ্যতার ইতিহাসের সাথে সমান্তরালে গল্পে চলে আসে Whatsapp, PUBG, SUV গাড়ি, আধুনিক কোলকাতার ট্র্যাফিকের যন্ত্রণার প্রসঙ্গ।
গল্পে একাধিক ডিটেকটিভ চরিত্রের মাধ্যমে একটা ক্রমবিবর্তনের ধারা ও অপরাধ এবং অপরাধীকে শনাক্ত করার ইতিহাসকেও ছুঁয়ে গেছেন লেখক। সময় পাল্টে গেলেও যে মানুষের আদিম প্রবৃত্তিগুলি একটুও পাল্টায়না সেই উপলব্ধি পাঠকের মনে জাগাতেও লেখক সফল। গল্পের মাঝামাঝি একটা দারুণ চমকের আভাষ আছে। তবে সে সম্পর্কে মন্তব্য করব না। নিজে পড়ে আবিস্কার করুন, তার আনন্দ আলাদা।
সামাজিক ইতিহাসের পাশাপাশি এদেশের মনোবিজ্ঞান, অ্যানাটমি, চিকিৎসা শাস্ত্রের ইতিহাস সম্পর্কেও পাঠক অবগত হবেন ‘সূর্যতামসী’র মাধ্যমে।উনবিংশ শতকের বাঙালি আর ইউরোপীয়দের সামাজিক দূরত্ব, থাকলেও ষড় রিপুর হাতে যে উভয়েই বন্দী তার আভাসও রয়েছে উপন্যাসে।
সেকালের বাবু সমাজ ও তাঁদের বিলাসবহুল জীবনের উল্লেখ, গণবধূদের জীবন যাপন, কথ্য ভাষা এসবের উল্লেখও আছে। চরিত্রদের নামের উল্লেখ পাঠকের রসভঙ্গ করতে পারে তাই সেপথে আর যাচ্ছি না।
Reviews
There are no reviews yet.