Description
নগরবধূ আম্রপালী – চিন্ময় নাথ
“দূরে দুধসাদা কাশ বন। হাওয়ায় ডানা ভাসিয়েছে গাংচিলের দল। মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেল একঝাঁক টিয়া। আর কোন পিছুটান অনুভব করলেন না আম্রপালী। শুধু অনুভব করলেন তাঁর জন্মান্তর ঘটে গিয়েছে।” (মন ছুঁয়ে যাওয়া লাইন) মনে মনে একবার আওড়ে নিলেন তথাগতর সেই অমোঘ বাণী, “কামনার সমান আগুন নেই। তৃষ্ণার সমান কষ্ট নেই। দেহের মতো দুঃখময় কিছু নেই। শান্তির সমান সুখ নেই। শান্তিই পরম সুখ। “সেই শান্তির খোঁজেই ধুলোমাখা পথে পা বাড়ালেন আম্রপালী। ”
জীবনের অতি সাধারণ উপজীব্য, কত সাবলীল ভাবে লিখেছেন লেখক — শান্তির অপর নাম যেন বুদ্ধ। বুদ্ধ কোনও ধর্ম নয়, বুদ্ধ জীবনের এক সম্পূর্ণ প্রকাশ— মানুষের মূলস্রোতে ফেরার এক পরম আশ্রয়। সর্বোপরি এক অজেয় বিশ্বাস মানবতার, পবিত্রতার।
আলাদা আলাদা অনেকগুলো চরিত্র। তাঁদের সাবলীল বর্ণনা। আড়াই হাজার বছরকে শব্দে ধরা বেশ কঠিন কাজ। সেই চ্যালেঞ্জটা ভালোই সামলেছেন লেখক।
অজাতশত্রু তাঁর রাজরক্তের গর্বে গর্বিত রাজপুরুষ। অথচ তাঁর মনের অন্ধকার দূর হয়নি। অন্য দিকে বিম্বিসার জ্ঞান- এর আলোকে প্রকৃত বুদ্ধঅনুগামী এবং প্রেমিক। শুদ্ধসত্ত্ব তাঁর আত্মশুদ্ধির আলোকে কামকে হেলায় উপেক্ষা করেন। অন্য পাশে শুভব্রত যুগপুরুষের সংস্পর্শে এসেও মনের গভীরের কালিমা মুক্ত হতে পারেননি, আত্মগ্লানিতে ভেসেছেন। লিচ্ছবি রাজ জয়ন্তও মনের তল পাননি সেই অপরূপ নারীর—সেই নারী যিনি নিঃশব্দ বিপ্লব ঘটিয়ে, সব জাগতিক সুখ বিসর্জন দিয়ে এক অনিশ্চিত জীবনের দিকে পা বাড়িয়ে দিলেন। যার আশ্বাসে অনেক জীবন সেবা পাবে, স্নেহ পাবে আর তিনি খুঁজে পাবেন জীবনের গূঢ় মানে। “নগরবধূ আম্রপালী” আরো বহু শতাব্দী মানুষ পড়ুক এটাই চাই। মুগ্ধতা রইল।
বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি।
আরও এরকম কাহিনি উপহার চাই লেখক চিন্ময় নাথের কাছ থেকে। ওনার আগের বইগুলো পড়েছি। ঝরঝরে গদ্য। পাহাড়ের প্রান্তিক মানুষদের নিয়ে গল্প বলেছেন। গল্পের ছলে তুলে এনেছেন পুরাণের নানান অজানা তথ্য। “নগরবধূ আম্রপালী”-তে যেন সম্পূর্ণ চেনা ছকের বাইরে হাঁটতে চেয়েছেন লেখক।
Reviews
There are no reviews yet.