Description
Details
লালনের এই চেতনাকে সম্বল করে সব্যসাচী লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় রচনা করেন তাঁর মনের মানুষ উপন্যাস। আমাদের কালের এই মহান কথাকারের কাহিনি নিয়ে আর-এক বরেণ্য চলচ্চিত্রকার গৌতম ঘোষ নির্মাণ করেন ওই নামেই এক ছবি। রূপালি ফিতেয় বাধা পড়ে লালনের সোনালি জীবনের কথা ও কাহিনি। সেটা শ্রম-উপলব্ধি-প্রেমের অনবদ্য সমীকরণ এই ছবি। মনের মানুষ ছবি বানানো সম্পর্কে গৌতম ঘোষের ভাষ্য এইরকম। ‘সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ‘ তাঁর উপন্যাসে গবেষকদের অনুসন্ধান, লালনের গান ও অনুমানের উপর ভিত্তি করে কাহিনি নির্মাণ করেছেন। সেই কাহিনি অবলম্বনে আমি নিজের বোঝাপড়া, গবেষণা সিনেমার ভাষার ব্যক্ত করার চেষ্টা করেছি এই চিত্রনাট্যে’। স্বীকৃতি-সম্মাননা-সমাদরে অভিনন্দিত হলো মনের মানুষ। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার ছবি মনের মানুষ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পেলো শ্রেষ্ঠ ছবির পুরস্কার স্বর্ণময়ূর (২০১০)। জাতীয় সংহতিমূলক শ্রেষ্ঠ ছবির পুরস্কারও মিললো জাতীয় চলচ্চিত্র উৎসবে (২০১০)। তবে এই ছবির সবচেয়ে বড়ো প্রাপ্তি দর্শকের সমাদর ও প্রশংসা। মনের মানুষ দেখে ইতিহাসবিদ তপন রায়চৌধুরী মন্তব্য করেন : ‘ছবিটি শ্রেষ্ঠ অর্থে ধর্মগ্রন্থ হয়ে ওঠে। স্থান নেয় নানক, কবির, দাদুর দোঁহার পাশে’। ‘আমি স্নাত’- মাত্র এই দুটি শব্দ দিয়ে তাঁর ভালো লাগার গভীর অনুভূতি প্রকাশ করেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। কথাশিল্পি সমরেশ মজুমদারের উপলব্ধি এইরকম : ‘শুধু ছবি বললে কম বলা হবে। আমি এক মহাজীবন প্রত্যক্ষ করলাম। বাংলা ভাষায় যাবতীয় বিশেষণগুলো মিইয়ে যাচ্ছে। তাই এইটুকুই বলা ভাল, সত্যজিৎ-ঋত্বিক-তপন সিংহের পরে এখন আমি স্বচ্ছন্দে গৌতম ঘোষের নাম উচ্চারণ করতে পারি।’ নাট্যজন মামুনুর রশীদ বলেন : ‘মানবধর্মের যারা উপাসক, তাদের জন্য এ ছবিটি হয়ে উঠবে এক সহায়ক দলিল’। লালনকে জানার পাশাপাশি তাঁকে অন্তরে উপলব্ধির ছবি এই মনের মানুষ। তাই এই ছবির নির্মাতা গৌতম ঘোষ সেই উপলব্ধি থেকেই বলতে পারেন : ‘আসুন, আমরা চেষ্টা করি লালনের মতো অসাম্প্রদায়িক উদারচিত্ত মানবিক ধারা আমাদের জীবনে ধারণ করতে।’
Author Biography
আধুনিক ভারতীয় চলচ্চিত্রের ভূবনে গৌতম ঘোষ একটি সম্মানিত নাম। এই বাঙালি চলচ্চিত্র-নির্মাতা বাংলা ছাড়াও তেলেগু ও হিন্দি ভাষাতেও ছবি নির্মাণ করে তাঁর কাজের এলাকা বিস্তৃত করেছেন। গৌতম ঘোষের জন্ম কলকাতায়, ২৪ জুলাই ১৯৫০-এ। তাঁর পূর্বপুরুষদের নিবাস ছিল বাংলাদেশের ফরিদপুরে। সান্ত¡না ঘোষ ও ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক হিমাংশুকুমার ঘোষ তাঁর মা ও বাবা। সাতচল্লিশের দেশভাগের শত সংকটেও পরিবারে শিক্ষা ও সংস্কৃতিচর্চার আবহ ব্যাহত হয় নি। গৌতম কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। ছেলেবেলা থেকেই ছবি তৈরির একটি ঝোঁক তাঁর মধ্যে জেগেছিল। ‘A Combination of theatre, music and Photography Shaped his mind as a Filmmaker’- তাঁর সম্পর্কে এই মন্তব্য যথার্থ। কলেজেই ছবি-বানানোর হাতেখড়ি। কলেজ ছাড়ার পর বিজ্ঞাপন-চিত্র তৈরি শুরু করেন। এরপর তথ্যচিত্র নির্মাণের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ১৯৭৯ সালে তেলেগু ভাষায় তৈরি করেন মাভূমি ছবিটি। তাঁর এই প্রথম ছবিই তাঁকে ভারতজোড়া খ্যাতি ও স্বীকৃতি এনে দেয়। গৌতম ঘোষ নির্মিত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে আছে : মাভূমি (তেলেগু, ১৯৭৯), দখল (১৯৮১), পার (হিন্দি, ১৯৮৪), অন্তর্জলি যাত্রা (১৯৮৭), পদ্মা নদীর মাঝি (১৯৯২), পতঙ্ (হিন্দি, ১৯৯৩), গুড়িয়া (হিন্দি, ১৯৯৭), দেকা (২০০১) আবার অরণ্যে (২০০৩), যাত্রা (হিন্দি, ২০০৬), কালবেলা (২০০৯), মনের মানুষ (২০১০)। এ-ছাড়া তিনি প্রখ্যাত সানাইবাদক বিসমিল্লা খাঁ, চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়, ধর্মগুরু দালাইলামা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেও কয়েকটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। চলচ্চিত্র-নির্মাতা হিসেবে গৌতম ঘোষ দেশে-বিদেশে অনেক সম্মাননা ও পুরস্কার পেয়েছেন। মাভূমি’র জন্য শ্রেষ্ঠ আঞ্চলিক ছবির জাতীয় পুরস্কার (১৯৮০), দখল-এর জন্য শ্রেষ্ঠ ছবির জাতীয় পুরস্কার স্বর্ণপদ্ম এবং সেইসঙ্গে পর্তুগালে চলচ্চিত্র উৎসবে রৌপ্য পদক (১৯৮২) ও ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত মানবাধিকার উৎসবে জুরি পুরস্কার (১৯৮২) পান। তাঁর পরিচালিত পার শ্রেষ্ঠ হিন্দি ছবির জাতীয় পুরস্কার (১৯৮৫) লাভ করে। ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে এই ছবি ইউনেস্কো পুরস্কার পায়। পার-এর পুরস্কারের তালিকায় আরো আছে : ফিগ্রেস্কি পুরস্কার, রেডক্রস পুরস্কার (ভার্না চলচ্চিত্র উৎসব : ১৯৮৭), শ্রেষ্ঠ পরিচালক ও চিত্রনাট্যকারের ফিল্মফেয়ার পুরস্কার। তথ্যচিত্রের পুরস্কার-স্বীকৃতির বিবরণও কম নয়। মনের মানুষ ভারতীয় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০১০-এ শ্রেষ্ঠ ছবির জন্য স্বর্ণময়ূর এবং ভারতীয় চলচ্চিত্র উৎসব ২০১০-এ শ্রেষ্ঠ জাতীয় সংহতিমূলক ছবি পুরস্কার পায়। বাঙালি চলচ্চিত্রকারের মধ্যে অসাধারণ কাজের জন্য চলচ্চিত্র-বোদ্ধা ও সমালোচকেরা সত্যজিৎ রায়-মৃণাল সেন-ঋত্বিক ঘটক-তপন সিংহের পরেই গৌতম ঘোষের নাম বিবেচনা করে থাকেন।
Reviews
There are no reviews yet.