Description
Details
লালন সাঁই (১৭৭৪-১৮৯০) লৌকিক বাংলার প্রধান সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি বাউলসাধনার শ্রেষ্ঠ ভাষ্যকারও তিনি। প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম ও শাস্ত্রকে অগ্রাহ্য-অস্বীকার করে তিনি যে মরমি ভুবন নির্মাণ করেছেন, তা মানবিক চেতনা ও বোধে ঋদ্ধ। এই বহুমাত্রিক লোকব্যক্তিত্ব ছিলেন সমাজমনস্ক সমকালীন সামাজিক সমস্যা তাঁকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছিল। তাই জাতপাত, সম্প্রদায়বিদ্বেষ ও প্রথা-সংস্কারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন গানের ভেতর দিয়ে জানিয়েছেন প্রতিবাদ। মরমি ভাবসাধনার এই স্বশিক্ষিত চারণকবির শিল্পচেতনা ও কবিত্বশক্তি বিস্ময়কর। ভাব-ভাষা-ছন্দ-অলংকারে তাঁর গান অসামান্য শিল্পসিদ্ধি অর্জন করেছিল বলেই রবীন্দ্রনাথের মতো মানুষকেও তা স্পর্শ ও প্রাণিত করেছিল। লালনের কৃতিত্ব এই যে, নিম্নবর্গের একটি অবজ্ঞাত লৌকিক ধর্মসম্প্রদায়ের সাধনসংগীতকে তিনি সংগীতসাহিত্যের মর্যাদা দিয়েছেন। লালনের গান তাই আজ বাঙালির গৌরবময় সাংস্কৃতিক সম্পদ। লালনের বাণী কেবল বাংলাভাষী মানুষের ভেতরেই আজ আর সীমাবদ্ধ নেই, সে গানের সুর ছড়িয়ে পড়েছে দূর-দেশেও। বিশ্ব-নাগরিক লালন আজ শান্তি-সাম্য-সম্প্রীতি-কল্যাণ-মানবতার প্রতীক হয়ে উঠেছেন। ১৮৮৫ থেকে লালনের গান সংগৃহীত ও প্রকাশিত হয়ে এলেও, লালনের গানের নির্ভুল ও নির্ভরযোগ্য সংকলনের অভাব পূরণ হয়নি। সেই লক্ষ্য সামনে রেখে লালনসমগ্র নামে লালনের যথাসম্ভব বিশুদ্ধ ও প্রামাণ্য একটি সংকলন প্রস্তুত করেছেন লালন-বিশেষজ্ঞ ডক্টর আবুল আহসান চৌধুরী।
Author Biography
সংগ্রহ-গবেষণা-ভূমিকা-সম্পাদনা : আবুল আহসান চৌধুরী বাংলার লোকসংস্কৃতি-চর্চা ও লোক-ঐতিহ্য-অন্বেষণের ক্লান্তিহীন এক শিল্প-শ্রমিকের নাম ডক্টর আবুল আহসান চৌধুরী। তাঁর জন্ম ‘লালনের দেশ’ কুষ্টিয়ার মজমপুরে, ১৩ জানুয়ারি ১৯৫৩। ফজলুল বারি চৌধুরী (১৯০৪-১৯৭৪) ও সালেহা খাতুন (১৯১৩-১৯৮৯) তাঁর জনক-জননী। পিতা ছিলেন সাহিত্যিক-সমাজসেবী-অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট। অধ্যাপক চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে বিএ (অনার্স) ও এমএ ডিগ্রি এবং পিএইচডি উপাধি অর্জন করেন। প্রায় ত্রিশ বছর অধ্যাপনা পেশায় যুক্ত। কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও বাংলা বিভাগের সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে ঐ বিভাগের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক। ডক্টর আবুল আহসান চৌধুরী মূলত প্রাবন্ধিক ও গবেষক। সমাজমনস্ক ও ঐতিহ্যসন্ধানী। তাঁর চর্চা ও গবেষণার বিষয় ফোকলোর, উনিশ শতকের সমাজ ও সাহিত্য-ব্যক্তিত্ব, সাময়িকপত্র, আধুনিক সাহিত্য ও আঞ্চলিক ইতিহাস। অনুসন্ধিৎসু এই গবেষক সাহিত্যের নানা দুষ্প্রাপ্য ও বিলুপ্তপ্রায় উপকরণ সংগ্রহ-উদ্ধার করে ব্যবহার করেছেন। তাঁর লালন সাঁই, কাঙাল হরিনাথ ও মীর মশাররফ হোসেন-বিষয়ক গবেষণা-কাজ দেশে-বিদেশে সমাদৃত হয়েছে। বিশেষ করে লালনচর্চায় তাঁর খ্যাতি ও প্রতিষ্ঠার কথা বিশেষ উল্লেখ্য। লালন ও অনুষঙ্গী বিষয়ে এ-পর্যন্ত তাঁর সাতটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ২০০০-এ অর্জন করেছেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য লালনমেলা সমিতির ‘লালন পুরস্কার’। প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৬৪। মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ডক্টর চৌধুরীর প্রথম বই স্বদেশ আমার বাংলা (১৯৭১, কলকাতা)। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ : কুষ্টিয়ার বাউল সাধক (১৯৭৪), কাঙাল হরিনাথ মজুমদার (১৯৮৮), জগদীশ গুপ্ত (১৯৮৮), লালন শাহ (১৯৯০), মনের মানুষের সন্ধানে (১৯৮৫), পাগলা কানাই (১৯৯৫), মীর মশাররফ হোসেন : সাহিত্যকর্ম ও সমাজচিন্তা (১৯৯৬), লোকসংস্কৃতি-বিবেচনা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (১৯৯৭), আব্বাসউদ্দিন (২০০২), অন্তরঙ্গ অন্নদাশঙ্কর (২০০৪), আলাপচারী আহমদ শরীফ (২০০৭)। সম্পাদিত গ্রন্থ : লালন স্মারকগ্রন্থ (১৯৭৪), ভাষা-আন্দোলনের দলিল (১৯৮৮), কাজী মোতাহার হোসেন রচনাবলী (১৯৯২), মহিন শাহের পদাবলী (১৯৯৩), কাঙাল হরিনাথ মজুমদার নির্বাচিত রচনা (১৯৯৮), প্রসঙ্গ হাসন রাজা (১৯৯৮), কাজী আবদুল ওদুদের পত্রাবলী (১৯৯৯), রবীন্দ্রনাথের অপ্রকাশিত পত্রাবলি (২০০০), বিস্মৃত সুরশিল্পী কে. মালিক : অপ্রকাশিত আত্মকথা (২০০১)। ডক্টর চৌধুরী ফোকলোর-বিষয়ক গবেষণা-পত্রিকা লোকসাহিত্য পত্রিকারও (১৯৭৫-১৯৮৪) সম্পাদক ছিলেন।
Reviews
There are no reviews yet.