Description
ঝুমনি: -” খবরদার নতুন বউ, যাই হয়ে যাক না কেন ঝড় উঠলে ভুলেও খাটের তলায় তাকাবি নে! বুঝেছিস?” -” ক…ক…কেন কী থাকে খাটের তলায়?” এই প্রশ্নে বৃদ্ধার মুখ মুহূর্তেই ফ্যাকাসে হয়ে যায়। কপালে জমে ওঠে বিন্দু বিন্দু ঘাম। প্রচন্ড আতঙ্কে কোনোমতে একটা ঢোক গিলে তিনি কাঁপা কাঁপা গলায় বলে ওঠেন শুধু একটাই শব্দ- ” ঝুমনি!” ঝুমনি আসলে কী? কেন একটা গোটা শহরের মানুষ এই একটা নাম শুনলেই আতঙ্কে কেঁপে ওঠে? কেন ঝড়ের সময় শহরের প্রতিটা বাড়ির থেকে ভেসে আসে মেয়ে বউদের একই সুরে ছড়া কাটার শব্দ? কেনই বা ধুলোচড়ার মানুষ ঝড়ের সময় খাটের থেকে মাটিতে পা ফেলতে পর্যন্ত আতঙ্কে শিউরে ওঠে? সাতাত্তর বছর পর আবারও জেগে উঠছে ক্ষণদেবীর মন্দির। কিন্তু কেন? কেনই বা শহরের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে বিশালকায় একটি সাদা সাপকে? প্রতিরাতে কী বলতে আসে সে একটি বাচ্চা মেয়েকে? এক উদ্ভ্রান্ত মানুষ পাগলের মত খুঁজেই চলেছে একটা রাস্তা। কোথায় যাওয়ার রাস্তা খুঁজছে সে? গভীর রাতে জঙ্গলের ভিতর এক পরিত্যক্ত কুয়োর চারপাশে কাদের যেন উন্মাদের মত নাচতে দেখা যায়। ঠিক কী চায় তারা? কয়েকশো বছর অপেক্ষার পর এইবার তার হাতে এসেছে সেই ভয়ঙ্কর সুযোগ। সত্যি সত্যিই কি এবার সফল হবে সে? পৃথিবীর বুকে সত্যিই কি তাহলে নেমে আসতে চলেছে ভয়াবহ কালতমসা! তাকে আটকানোর কি কোনই উপায় নেই! কিছু উদ্ভ্রান্ত মানুষ বদ্ধপরিকর এর শেষ দেখতে। যদিও তাদের হাতে তাকে আটকানোর কোনোই উপায় নেই। কী হবে তাদের পরিণতি যখন শুরু হবে ঝুমনির ভয়ঙ্কর খেলা? যে খেলার একটাই মাত্র নিয়ম… একবার ঝড় উঠলে যাই হয়ে যাক না কেন ভুল করেও খাটের তলায় তাকানো যাবে না! কারণ খাটের তলায় তাকালেই…
Sruti Misra –
বই: ঝুমনি
লেখক: ত্রিজিৎ কর
বিভা পাবলিকেশন
মূল্য: ২৪৪/-
বিশেষ সতর্কতাঃ ঝড় ওঠার পর কারেন্ট চলে গেলে খাটের তলায় তাকাবেন না, এমনকি খাটের থেকে মাটিতে পা পর্যন্ত ফেলবেন না।
“ঝুমনি” এবং “আবার ঝুমনি” নামে দুটি গল্প রয়েছে এই বইটিতে। প্রথম গল্পে একটা গা ছমছমে ভাব তৈরি হলেও দ্বিতীয় গল্পটি শেষের দিকে ধীরে ধীরে ফ্যান্টাসির রূপ নেয়। “ঝুমনি” গল্পে ত্রিজিৎ বাবুর লেখনী শক্তি খুব টানটান মনে হয়। প্রতিটা বর্ণনা এতটাই সূক্ষ্ম, যেন চোখের সামনে সিনেমাটিক দৃশ্য ফুটে উঠছিল। প্রথম গল্পটি যেমন ভাবে শেষ হয়েছিল আমি দ্বিতীয় গল্প নিয়ে একটু ভয়ে ভয়েই ছিলাম। কোথাও এই ভালোলাগার ব্যাঘাত ঘটবে না তো? তবে আমি একটুও আশাহত হইনি।
দ্বিতীয় গল্প যতই এগিয়েছে, একের পর এক রহস্য মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ঝুমনি কে? ঝড় উঠলেই ধুলোচড়ার মেয়েবৌয়েরা একই সুরে ছড়া বলে কেন? সাতাত্তর বছর পর ক্ষণদেবীর মন্দির কেনই বা জেগে উঠবে? ঝুমনির কী আদৌও খিদে ফুরোবে? নাকি রক্তের স্বাদে সে শহরের কোন বাড়িতে ঝড়ের অন্ধকার রাতে খাটের তলা থেকে আবার ডাক দেবে কাউকে?
ভুলভ্রান্তি যা চোখে পড়েছে তা হল, অংশুমানকে বেচারী বলে উল্লেখ করা, মিত্তির জেঠিমার জায়গায় ঘোষ জেঠিমা লেখা, এছাড়াও অল্প কিছু প্রিন্টিং মিস্টেক রয়েছে। নিজের ছেলের সাংঘাতিক বিপদ জেনেও অপার গল্প শোনার প্রতি আগ্রহ জাগাটা একটু অবাস্তব লেগেছে। ব্যস্, এটুকুই যা। হরর সাসপেন্স হিসেবে এই বইটা পড়ে আমার বেশ লেগেছে। কিছু জায়গায় বিবরণ এতটাই ভয়াবহ ছিলো, পড়ার পর গা শিউরে উঠছিল। ত্রিজিতবাবু এমন সুন্দর লিখেছেন, এই গল্প দুটোর ওপর সিনেমা করা গেলে দারুণ হবে।
আপনারা যারা ভূতের গল্প পড়তে ভালোবাসেন, খুব শিগগির এই বইটা পড়ে ফেলুন। পড়া হয়ে গেলে আপনার অভিজ্ঞতা জানাতে ভুলবেন না কিন্তু।
Boipoka Bakshi কে অনেক ধন্যবাদ ছবি তুলে দেওয়ার জন্যে।
সবাই সাবধানে থাকুন, ভালো বই পড়তে থাকুন ❤️