Description
গান ধরলেন ফকির। শোনা সেই গান। পুকুর ধারে যা গেয়েছিলেন ফকির। গানে স্পষ্টই বলা হয়েছে – ‘পূর্ণিমার চাঁদ ধরবি কে রে/ তোরা দেখ চেয়ে ত্রিবেণীর উত্তর দক্ষিণ/ রবি শনি তার দুই কিনারে। ’ পূর্ণিমার চাঁদ হল চন্দ্রকলার বৃদ্ধির পর একেবারে পূর্ণাঙ্গ অবস্থা। এই পূর্ণচন্দ্র হল বাউল মতের প্রেম। পূর্ণচন্দ্রের প্রতীককে বাউল প্রেমই বোঝেন। ‘পূর্ণিমার চাঁদ’ ধরার অর্থ প্রেমকে সাঙ্গ করা। যে প্রেম শরীরের মধ্যে রয়েছে। প্রেম এখানে কাঙ্খিত পরম ঠিকই কিন্তু সেই পরমকে পেতে, উপলব্ধি করতে শরীরের যোজন যোজন পথই অতিক্রম করতে হয় বাউলকে। Platonic Love এর কথা আমরা জানি। আবার শরীর ছাড়া প্রেম হয় না কিছুতেই; আমি তোমাকে ভালোবাসির অর্থ তোমার সত্ত্বাকে ভালোবাসি ঠিকই, কিন্তু এই সত্ত্বা তো শরীরের মধ্যস্থিত সত্ত্বা; রক্তমাংসের সত্ত্বা, তাই শরীরের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলোকেও ভালোবাসার সঙ্গে জড়িয়ে নিতে চান অনেকে। বাউল এই দ্বিতীয় মতে থাকলেও তাঁদের বিশ্বাস শরীরের পথঘাট, রজ-বীর্য পার হয়ে এই ভালোবাসা হল কাম-পথকে পেছনে রেখে প্রেম-পথকে সামনে আনা। এই পথ সাধনার পথ। প্রকৃতি-পুরুষের / যুগল শরীরের সাধনপথ। বাউল বলে একে ‘রাগের ভজন’। ‘রাগ’ এখানে, এ পথে আত্মার মোহাবস্থা বা নিজের কামাবস্থা কাটিয়ে ফেলে নিজের জাগ্রত দেহকে গরীয়সী করে তোলা। দেহ করে তোলা ভাবদেহ। বাহ্যদেহকে নষ্ট করলেই দেহ হবে ভাবদেহ। তার জন্যই দেহসাধনা। বাউলের সাধনা বাউল মতে ‘রাগের ভজন’ যেমন, তেমনই, ‘রাগের কারণ’। তাঁরা নিজেকে অনেক সময় ‘রাগের মানুষ’ বলেও উল্লেখ করে থাকেন। যা ‘মনের মানুষের’ নামান্তর ছাড়া আর কিছুই নয়।
Reviews
There are no reviews yet.