Description
দেশ দেখার নেশায় কম বয়সে ঘর ছেড়েছিলেন প্রখর রুদ্র। বিচিত্র সেসব অভিজ্ঞতা। একই পাড়ার লালামোহন গাঙ্গুলির সাথে তাঁর ছিল গভীর সখ্যতা। তাই তো প্রখর রুদ্র তাঁর বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা পোস্টকার্ডে লিখে জানাতেন লালমোহন বাবুকে। একা মানুষ লালমোহনবাবু সেসব অভিজ্ঞতায় নিজের কল্পনার রঙ মিশিয়ে ছোটদের জন্য লিখেছিলেন বেস্ট সেলার রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজ।
বয়সকালে প্রখর রুদ্র ফিরে আসেন কোলকাতাতে ভাইয়ের সংসারে। কিন্তু ফেলা আসা অতীত যে পিছু পিছু তাঁর জন্যই কোলকাতায় এসে ফাঁদ পেতেছে, তা কি তিনি জানতেন! সব কবিতায় অন্ত্যমিল হয় না, আর সব নায়করা বাস্তবের মাটিতে জিতে যায় না। তাই ছন্দে বাঁধুক ধন্দ —
মাকড়শার জালের মতই সুনিপুণ ফাঁদ,
পেতে রাখে পুরানো আঘাত।
ছিন্ন ভিন্ন ছিন্নমস্তায় কারা করেছে পাপ?
কালো ঘোড়া বুকে নিয়ে বাঁচে প্রতিশোধের উত্তাপ।
চক্রব্যূহে চৈতন্য হয়ে যাবে খুন,
প্রখর রুদ্রের বুড়ো হাড়ে ধরেছে কি ঘুণ?
কে বলল শুধু গোয়েন্দাদেরই মগজাস্ত্র থাকে? অপরাধকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যেতেও লাগে সমান গ্রে ম্যাটার! অপরাধকে শৈল্পিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে সিদ্ধহস্ত “ডার্ক হর্স” – এক কনসালটেন্ট ক্রিমিনাল।
অপরাধ যখন গর্ববোধ ও যোগ্যতা প্রমাণের মাধ্যম হয়ে ওঠে তখন… রচিত হচ্ছে রহস্যের এক চক্রব্যূহ… এ গল্প সাদা-দের নয়… এ গল্প কালোদের নয়… এ গল্প ধূসরদের।
Saurabh Bakshi –
এই বইটা নিয়ে লেখার আমার তেমন একটা ইচ্ছে ছিলো না। কারণটা একটু পরে বলছি। কিন্তু এক বন্ধুর জেদে বইটা শেষ অবধি পড়তেই হলো তার ফলাফল এই লেখা।
?প্রথমেই নিজের একটা ভুল স্বীকার করে ফেলি। আমি এই বইটি থেকে নেওয়া প্রথম ৪টে গল্প audiostoryতে শুনেছিলাম and ভালো লাগেনি। তার পর বই থেকেও সেই ৪টে গল্প পড়েই আর পড়িনি। কারণ আমি ধরেই নিয়েছিলাম যে বইটা ভালো লাগবে না। এটা আমার ভুল হয়েছিল।
এখন শুরু থেকে আবার পুরো ১৫টা গল্প পড়ে আমার ঠিক কি কি মনে হলো, সেটাই বলি –
?যদি বইটা পড়ার আগে আপনার মনে জটায়ু তথা আমাদের সবার প্রিয় সত্যজিৎ রায় এর সৃষ্টি প্রখর রুদ্র চরিত্রটি সম্পর্কে কোনো ধারণা থেকে থাকে আর আপনি বইটা সেই ধারণার ওপর ভিত্তি করেই পড়েন তবে বলবো যে এটা ভুল করছেন।এভাবে শুরু করলে বইটা আপনার একদম ভালো লাগবে না।
?এই বইটা আসলে টানটান উত্তেজনাপূর্ণ গোয়েন্দা গল্পের থেকে আলাদা ধরণের। এটা পুরোদস্তুর একটি forensic থ্রিলার। প্রতিটি গল্পেই প্রচুর পরিমানে রসায়ন, বিষ, বিভিন্ন scientific procedures এর ব্যাপারে প্রচুর তথ্য দেওয়া হয়েছে। আর তার ভিত্তিতেই রহস্যের সমাধান হয়েছে। Infact কয়েকটা জায়গায় তথ্য এতো বাড়াবাড়ি রকমের দেওয়া হয়েছে যা গল্পকে boring করেছে।
আর সত্যজিৎ রায় নন। এই গল্পগুলোর মধ্যে একটা বড় প্রভাব রয়েছে কোনান ডয়েল এর। একথা লেখক ভূমিকাতেই জানিয়েছেন। বিশেষ করে যদি আপনি BBC-র Sherlock দেখে থাকেন তবে The Great Game আর The Reichenbach Fall এর সাথে মিল থাকা অংশগুলো আপনার চোখ এড়াবে না।
?এই প্রসঙ্গেই বলি। এই বইটাতে ১৫টা ছোট গল্প আছে। সেগুলো নাটকীয়তা, কথোপকথন, twist and turns এর দিক থেকে অনেকটাই tv show এর মতোই লেগেছে আমার। যেমন Castle, The Mentalist, Dexter, Bones এই সব যদি আপনি দেখে থাকেন, তবে বুঝতে পারবেন আমি কেমন বলতে চাইছি। আরো একটা বড় মিল হচ্ছে Crime Tv Shows এর মতোই এই গল্পগুলোর প্রতিটাতে একটা করে ছোট রহস্য আছে যা গল্প শেষ হওয়ার সাথে সাথেই সমাধান হয়ে যায়, আর একটা বড় রহস্য আছে যেটা প্রায় ১৫টা গল্প জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে।
?গল্পগুলো একবার পড়ার জন্য ঠিকঠাক। খুব ভারী সাহিত্যগুণ আশা করে পড়বেন না। এই গল্পের লক্ষ্য পাঠকের বিনোদন আর সেটা মোটামুটি সব গুলো গল্পই দিতে পেরেছে।
?তবে এটাও বলবো যদি আপনি বেশি logically ভাবেন তবে কিছু কিছু গল্প দাঁড়াবে না। এক্ষেত্রে আমি উদাহরণ দিয়ে spoiler দেবো না। প্রথম ৩-৪টে গল্পের থেকে পরের গল্পগুলো বেশি সাবলীল। প্রথম দিকের গল্পগুলোতে পুলিশকে এতোটা বোকা দেখানো হয়েছে যে সেটা বড় চোখে লাগে। সবথেকে যেটা আমার অদ্ভুত লেগেছে যে প্রখর রুদ্র আর ইন্দ্রানীর ফরেনসিক ব্যাপারে বিশাল জ্ঞান। তারা বলে দিলে তারপর পুলিশ সেই টেস্টটা করলেই অপরাধী পেয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ পুলিশ সেই টেস্ট গুলোর ব্যাপারে জানে। কিন্তু প্রখর রুদ্র বা ইন্দ্রানী না বলা অবধি নিজে ভেবে সেই টেস্টগুলো করতে পারেনা!
পরের দিকে গল্পগুলোতে তাও পুলিশ কিছু কাজ নিজে নিজে করতে পেরেছে দেখে ভালো লাগলো।
?আপনি গল্পগুলো শুধু শুনে থাকেন, audio করার সময় অদ্ভুত ভাবে কিছু কিছু গল্পের ২-৩ লাইন বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ২-৩ লাইন হয়তো বেশি কিছু নয় কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেগুলো খুব বড়ো plot hole তৈরী করেছে। এটা কেন করা হয়েছে কে জানে। বিশেষ করে তৃতীয় গল্পটাতে বন্দুক আর ব্যাঙ্ক account নিয়ে দুটো ব্যাপার আছে যেগুলো বেশ বড় ভুল মনে হয়েছিল শোনার সময়।
?যাই হোক। সবগুলো গল্প পড়ে আমার যে সব চিন্তাধারা পালটে গেছে, এটাই আমার পড়া শ্রেষ্ঠ ক্রাইম থ্রিলার সেরকম নয়। আবার খুব যে খারাপ তাও নয়। একটা নতুন কিছু করার চেষ্টা করেছেন লেখক। আর সেটা বোঝা যায় গল্পগুলো পড়লে। পরে কি হতে চলেছে সেটা জানার interest থাকলো।
এটাই শুধু বলবো আমার মতো না পড়েই বা শুধু শুনে একটা ধারণা তৈরী করে নেবেন না। ইচ্ছে হলে পড়ে দেখুন। নামের nostalgia থেকে বেরিয়ে এসে পড়লে খুব একটা খারাপ লাগবে না মনে হয়।