Description
বাঙালির ব্যর্থ প্রেমকে রাম-সীতাই সফল করতে পারেন। প্রথমে ওঁদের যুগল মূর্তি ধ্যান করতে হবে। তার পর একটি সাদা ফুলের গন্ধ নিতে নিতে প্রেমিক বা প্রেমিকার নাম ও গোত্র বলতে হবে। এই ভাবে সাত দিন করুন, ফল অবধারিত। স্বামীকে বশীভূত করতে গো-চনা জরুরি। শনি বা মঙ্গলবার গো-চনা, কুমকুম ও কলার রস একত্র মিশিয়ে কপালে তিলক ধারণ করলে স্বামী তৎক্ষণাৎ স্ত্রীর বশংবদ হবেন। এই বিজ্ঞাপন গত বছরেই বাংলার এক জ্যোতিষ-পত্রিকায় বেরিয়েছিল। দলবদল কি আর শুধু আজকের ব্যাপার? প্রভাস রায় ও তাঁর কয়েক জন বন্ধু ঠিক করেছেন, কংগ্রেসে আর নয়। কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেবেন। তাঁদের রাজনৈতিক গুরু বিপিনবিহারী গঙ্গোপাধ্যায় প্রায় কেঁদে ফেললেন, ‘‘ওরে, তোরা যদি যাওয়াই স্থির করলি, আমাকে সঙ্গে নিয়ে গেলি না কেন?’’ কৃষ্ণপ্রিয় দাশগুপ্তের এই বইয়ের মজা এইখানেই। তিনি কোনও ধারাবিবরণী বা বিশ্লেষণী তত্ত্বে ঢোকেননি, কিন্তু মূল ধারার বিখ্যাত সংবাদপত্রগুলিতে ছাপা খবর (তাদের ‘দ্বিচারিতা’র দিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন), পাত্র-পাত্রীর বিজ্ঞাপন থেকে ‘দুষ্টুমিষ্টি বোল্ড রিলেশন’, হাল আমলের জ্যোতিষ-পত্রিকা, বটতলা, বশীকরণ, ওঝা, ডাকিনি ও গুণিন বিদ্যার বই থেকে অশোক মিত্র, অসীম চট্টোপাধ্যায়ের নিবন্ধ সব পাশাপাশি সাজিয়ে দিয়েছেন। আর সেটাই নিঃশব্দে ধরে দিয়েছে আধুনিক বাঙালির জীবন। একুশ শতকের বাঙালির বেঁচে থাকার হদিশ। এ কালের ঘটনাবলি ও নানান চরিত্রকে নিয়ে এক সামাজিক দলিল। অবশ্যই ‘গোটা ছবিটা’ নয়, ‘তবে অনেকটাই ধরা যাবে’। কৃষ্ণপ্রিয় দেখান, এই সমাজে ‘পাত্র চাই, পাত্রী চাই’-এর পাশাপাশি আরও একটি জিনিসের বিজ্ঞাপন ক্রমবর্ধমান। প্রাইভেট গোয়েন্দা সংস্থা, বিবাহের আগে ও পরে তথ্যানুসন্ধান। পড়তে পড়তে বোঝা গেল, পাবলিক ইউরিনাল ও ট্রেনের কামরায় হলুদ কাগজে সাঁটা ‘গুপ্তরোগ, সিফিলিস’ চিকিৎসার দিন গিয়েছে। এখন বাজারে জাঁকিয়ে বসেছে অজস্র মাসাজ জেল। পণের জন্য বধূহত্যার খবরের পাশাপাশি উঠে আসে দিঘায় পরকীয়ারত যুগলের আত্মহত্যা। রামমোহন-বিদ্যাসাগর-রবীন্দ্রনাথই তো বাঙালির একমাত্র পরিচয় নয়। পড়তে পড়তে মনের গভীরে নীরদচন্দ্র চৌধুরীর ‘বাঙালি জীবনে রমণী’ ঝিলিক মারে। বাঙালি তো শুধু আজই রিপুতাড়িত নয়। বিভিন্ন অবৈধ সম্পর্ক নিয়ে এখানে শাশুড়ে, ভাশুড়ে ইত্যাদি কত শব্দই যে সে বইয়ে ফাঁস করে দিয়েছিলেন নীরদবাবু! কমিউনিস্ট আন্দোলন দিয়েও এই নৃগোষ্ঠীকে বোঝানো যায় না। এই জনসংস্কৃতিতে দুটো সুতো পাশাপাশিই থাকে। ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্টের আগমনের পাশাপাশি সমান তালে সাড়া জাগায় ‘বাবা তারকনাথ’ সিনেমা। সাড়ে তিনশো পৃষ্ঠার বইটি পড়তে পড়তে তাই হাসি-রাগ-দুঃখ-লজ্জা সব এক সঙ্গে পাঠককে আশ্রয় করে। কিন্তু সে সব অনুভূতিমালা নিরর্থক। ভূমিকার অন্তিমে লেখকের বি.দ্র. ‘‘কাউকে কোনও রকম আঘাত দিতে বা অসম্মান করতে এই বই, কোনও ধরনের চেষ্টা করেনি। কেবল ‘সরল বিশ্বাসে’ বহু উদ্ধৃতির একটা সংকলন করেছে মাত্র।’’
Reviews
There are no reviews yet.