Description
বাউল এক বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়, যার জন্ম জীবনের সহজ-সরল রস ও অন্তর্জগতে ডুবে থাকা সাধনায়। বাউল দর্শন মূলত প্রাচীন ভারতের লোকায়ত মানবতাবাদী দর্শনের উত্তরসূরি। এখানে জাতপাত, ধনদৌলত, লিঙ্গ কিংবা সামাজিক বিভাজনের কোনও স্থান নেই—এদের মূলমন্ত্র ‘মানুষকে ভালোবাসা’। কূপমণ্ডূকতা ও সংকীর্ণ ভাবনার ঊর্ধ্বে উঠে এরা বিশ্বাস করেন মানবতাকেই পরম সত্য হিসেবে।
বাউল সাধনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ‘মানুষতত্ত্ব’—দেহেই ঈশ্বর, পরলোক বা জন্মান্তরের ধারণা তাঁদের কাছে গুরুত্বহীন। শাস্ত্র যেখানে বাহ্য ধর্মাচারকে গুরুত্ব দেয়, বাউলরা সেখানে খোঁজ করেন অন্তর্জগতের আলো। তাঁদের মতে, ‘সোনার মানুষ’ হয়ে ওঠাই জীবনের আসল সাধনা—যে মানুষে ভেদাভেদ থাকে না, থাকে শুধু প্রেম ও সহানুভূতি। আর এই সাধনার অন্যতম মাধ্যম বাউল গান, যা একযোগে গান, দর্শন, আত্মসন্ধান এবং সাহিত্যিক রসের সম্মিলন।
গগন হরকরা যেমন প্রশ্ন করেন, “আমি কোথায় পাব তারে, আমার মনের মানুষ যেরে”—ঠিক তেমনই বাউলরা চিরন্তন পথের পথিক, অন্তরের মানুষকে খুঁজে বেড়ানোই যাঁদের ধ্যানজ্ঞান। ফকির লালন শাহ এই ধারার সর্বশ্রেষ্ঠ সাধক। তাঁর জন্মস্থান ও পরিচয় আজও বিতর্কিত; তিনি হিন্দু না মুসলমান, কুষ্টিয়া না ঝিনাইদহ—এইসব প্রশ্নের উত্তর এখনও গবেষণাধীন। বিশিষ্ট লোকসংস্কৃতি বিশারদ ড. আশরাফ সিদ্দিকী লালনকে বলেছেন, ‘শতাব্দীর ফুল’।
লালন চৈতন্যভাবধারার মানবপ্রেম ও সুফি দর্শনের মেলবন্ধনে গড়েছিলেন এক বৈশ্বিক ভাবসম্প্রদায়—যা ধর্মীয় বিভেদ ছাপিয়ে মানবতার এক নতুন ব্যাখ্যা দেয়। এই সংকলন সেই লোকায়তিক বাউলচর্চা, লালনের জীবনদর্শন ও বাংলার মাটিতে জন্ম নেওয়া এক অনন্য সাধনার বিস্ত্রিত বর্ণনা বহন করে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি এক অত্যন্ত সময়োপযোগী দলিল।
Reviews
There are no reviews yet.