Description
“মুহম্মদ মনসুরউদ্দীন-সংকলিত ‘হারামণি’-র ভূমিকায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, ‘বাউল গানের ভাষায় ও সুরে হিন্দুমুসলমানের কণ্ঠ মিলেচে, কোরান পুরাণে ঝগড়া বাধে নি।’ সেটা বাউল-পরম্পরায় সব সাধকেরাই ধারণ করেছেন। উকিল মুনশিও সেই একই পথের পথিক।
উকিল মুনশি হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের বিভিন্ন পুরাণের বিষয়বস্তু নিয়ে গান রচনা করেছেন। বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের পৌরাণিক চরিত্রগুলোকে উপজীব্য করে প্রচুর গান রচনা করেছেন। উকিল নিজে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ হয়েও (যদিও বাউলেরা প্রচলিত অর্থে ব্যবহৃত ধর্মকে অস্বীকার করে মানবধর্মে বিশ্বাসী) হিন্দু-মিথকে অবলম্বন করে গান রচনার বিষয়টি তাঁর উদার ও মুক্তমনের পরিচায়ক।
হিন্দু-পুরাণে বহুল আলোচিত রাধা-কৃষ্ণের প্রণয়কাহিনি তাঁর গানের বিশাল অংশ জুড়ে বিধৃত হয়েছে। এর বাইরে নিমাই, শচীমাতাও তাঁর গানের অন্যতম পার্শ্ব-চরিত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছেন। তবে এসব গানের চরিত্রগুলোর বেদনার্ত-সময়ের করুণ ঘটনাগুলোই উকিল উপস্থাপন করেছেন। রাধা-কৃষ্ণের প্রেমবিষয়ক রচিত এসব বিচ্ছেদ গান তরুণ প্রজন্মের কাছে সাম্প্রতিক সময়ে অধিকমাত্রায় গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।
কৃষ্ণ বিরহে রাধার প্রাণ যখন উতলা হয়ে চরম বিরহ-পর্যায়ে পৌঁছায় তখন উকিল মুনশির কণ্ঠে যেন বিরহিণী রাধার খেদোক্তি ঝরে-‘কৃষ্ণপ্রেমে পোড়া দেহ কী দিয়া জুড়াব গো সখি/কে বুঝিবে অন্তরের বেদনা’। ‘ফুলশয্যা’ সাজিয়ে রাতের প্রহর কৃষ্ণের অপেক্ষায় নির্ঘুম কাটিয়ে দেওয়ার পরও যখন তাঁর দেখা মেলে না, তখন ‘অভাগিনী’ রাধা কৃষ্ণকে ধরে আনার জন্য ‘বৃন্দা দূতি’-কে পাঠান। পুরাণের এই চিরায়ত ঘটনার ‘বৃন্দা দূতি’ সেজে উকিল মুনশি শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশে নিবেদন করেন-
শ্যাম বিচ্ছেদে প্রাণ বাঁচে না
মইল গো রাই কাঞ্চাসোনা।
ও কৃষ্ণ হে
মথুরাতে হইয়া রাজা
কুব্জার সনে ভালোবাসা
রাইয়ের কথা মনে ছিল না,
ও রাইয়ের সোনার অঙ্গ মলিন হলো
দেহেতে প্রাণ আছে কি না।
ও কৃষ্ণ হে
আমি রাইয়ের বৃন্দা দূতি
তোমায় নিতে আসিয়াছি
বলো কৃষ্ণ যাবে কি না,
আমি দেখে আইলাম দশম দশা
ডাকলে রাইয়ে কথা কয় না।
ও কৃষ্ণ হে
বৃন্দাবন বন হইয়াছে
যমুনার জল নীরব আছে
পখিগণে কথা বলে না,
উকিল মুনশি ধুলায় পড়ে
করতেছে সদায় রোদনা।”
বাংলাদেশের বাউল ফকির লোকশিল্পী
সুমনকুমার দাশ
Reviews
There are no reviews yet.