Description
লেখক বলে বিজ্ঞাপিত হবার আগে আমাকে বিজ্ঞাপনের লেখক হতে হয়েছিল। এটি আমার জীবনের সেই অংশের একটি পর্ব। কাহিনীটার গোড়ায় মুখবন্ধের মত একটুখানি দরকার।
বস্তুতঃ লেখামাত্রই তো বিজ্ঞাপন – লেখকের নিজের। তাঁর জীবনের নানান কাজ, নানা বাহাদুরি, ভালোবাসা পাওয়া না পাওয়ার যতো দুর্ভোগের অকথিত কাহিনী বৃত্তান্ত — বিভিন্ন নায়ক নায়িকার নামের ছলনায় ইনিয়ে বিনিয়ে, সেদিক দিয়ে ধরলে প্রত্যেক লেখকই বিজ্ঞাপনলেখক, নিজের বিজ্ঞাপনদাতা। কিন্তু এটি ঠিক সে রকমের নয়। শ্রী নিয়ে শুরু হলেও শেষপর্যন্ত ভারী বিশ্রী ব্যাপার।
টুকটাক লিখি তখন—ছোটদের পত্রিকায়—রামধনু আর মৌচাকে, মোটামুটি পাঁচ দশটাকা মিলে যায়। সেইকালে হঠাৎ একদিন শ্রীঘৃত-র সম্পর্কে একটি স্তুতিবাক্য মনের মধ্যে গজিয়ে উঠেছিল হঠাৎ।
‘বাজারে দুই প্রকারের ঘি—শ্রী এবং বিশ্রী—কোনটি আপনার পছন্দ।’
বিজ্ঞাপনের শ্লোগান হিসেবে নেহাৎ মন্দ নয়, এবং প্রায় গানের মতই মর্মভেদী, গুলির মতই লক্ষ্যভেদকারী।
এইটাই প্রস্তুতিপর্ব। বাক্যটা ছত্রাকারে গজাতেই ওটা একটা খামের ভেতর পুরে কটন স্ট্রীটের ঘি-ছত্রে, শ্রীঘৃতের মালিক শ্রীঅশোক রক্ষিত মশায়ের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিলাম—তিনিই ওখানকার ছত্রপতি, এই ধরনের একটা আন্দাজ ছিল।
কয়েকদিন পরে ডাকে একখানা চেক এলো—একশ টাকার চেক। আর সেই সঙ্গে তাঁর ডাক। ডাকে সাড়া দিলাম। গেলাম তাঁর কাছে। টাকা তো দিয়েছেনই, সেই সঙ্গে তিনি একটিন শ্রী-ঘি উপহার দিতে চাইলেন।
তাঁর ওই ঘৃতদান আমি সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করেছি। ঐ চেকটাই চের। তার ওপর ফের কেন? ঘি নিয়ে আমি করব কি মশাই? আমার কি বাড়িঘর পরিবারবর্গ আছে? থাকি তো একটা মেসে। সেখানে ঐ ঘিয়ের টিন ঘাড়ে নিয়ে হাজির হলে হুলুস্থুল পড়ে যাবে। তারপর বিনে পয়সায় ঐ ঘি চালাও খেয়ে পেটের অসুখ হয়ে যাবে সকলের। শ্বজাতি ঠিক না হলেও আমার স্বজাতি মনুষ্যকল্প অনেকের পেটেই ত ঘি তেমন সয় না। তখন তারা সবাই মিলে মেরে ধরে বাসার থেকে তাড়িয়ে দিক আমায়। বাস্তুহারা হই আর কি!
তাই ঘি-টা আর নিইনি। তখন কি আর জানি, (ঘি-না-খাওয়া মগজে ঘিলুজাতীয় কিছু ছিল না নিশ্চয় তখন) যে ঐ ঘি ঘাড়ে করে না হয়ে পাশের দোকানে সস্তাদরে বেচে দিলেও অন্ততঃ আরো শ’খানেক টাকা (সেকালে ঘি-এর দর কত ছিল কে জানে!) কি আর না আসতো !
Reviews
There are no reviews yet.