'অনেকের সুখে মনখারাপ হয়। তারা একটু দুঃখ চায়। তেমন ক্রেতারাই কেনে। আমার ছিল। শেষ হয়ে গেছে। মানে সবই বিক্রি হয়ে গেছে। আজ তোমাকে দেখে মনে হল, তোমার অনেক দুঃখ আছে। তাই বলছি। কেজি দুই বিক্রি করো। বদলে আমি তোমাকে তিন কেজি সুখ দেব।' 'সুখ? কেমন করে দেবে?' 'রাজি আমার কথায়? তাহলে এসো বাইরে। আমার গাড়ির কাছে।' বলেই লোকটা ঝাপসা ঝাপসা আলো আর অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। সুভদ্রা দেখল লোকটা রাস্তার ওপারে গিয়ে ওর গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে আছে। লোকটার কিছুটা দেখা যাচ্ছে। সবটা নয়! কিছু আছে... কিছু নেই... হয়তো আলো হয়তো ছায়া... সুভদ্রা কিছু বুঝল না সেভাবে। কিন্তু একটা কথায় লোভ হচ্ছিল। লোকটা সুখ দেবে তিন কেজি। দুঃখ নেবে কেজি দুই। এক কেজি কম নিচ্ছে। যাবে ওখানে সুভদ্রা? সস্তার দিকটা খুব টানে এখন সুভদ্রাকে! লোকটাও ভীষণভাবে টানছিল সুভদ্রাকে। অন্ধকার ঘর থেকে বেরিয়ে এল সুভদ্রা। রাস্তা পেরিয়ে চলে গেল চলতা-ফিরতা দোকানের কাছে। লোকটা ছাইরঙের চোখ দিয়ে ওকে দেখল। একটা চিমটে বের করে সুভদ্রার মাথাটা দু' পাশ দিয়ে চেপে ধরল। যন্ত্রণায় চেঁচিয়ে উঠতে যেতেই একটা হিলহিলে সিলসিলে কিছু মাথা থেকে বেরিয়ে আসছে টের পেল। খুব খুব আরাম লাগছে ওর। যেন আগের মতো মায়ের কাছে আদর খাচ্ছে। যেন শুক্তি নদীতে বাবার সঙ্গে মাছ ধরতে গিয়ে ভেজা বালিতে পা ডুবিয়ে আগের মতো নাচছে। যখন লোকটা সুভদ্রাকে ছেড়ে দিল, সুভদ্রা মাথা সরিয়ে নিতে নিতে দেখল লোকটার হাতে একটা কাচের বয়াম। বয়াম ভর্তি কাদা কাদা তরল। লোকটা বলল--- 'যাও। তিন কেজি সুখ দিয়েছি। দু' কেজি দুঃখ নিলাম। এক কেজি পাওনা রইল। দরকারে নেব।' প্যান্ডোরার বাক্স (এক ডজন ডার্ক ফ্যান্টাসি) সাগরিকা রায় প্রকাশক: দ্য কাফে টেবল প্রচ্ছদশিল্পী: স্বর্ণাভ বেরা